পাবনায় প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে চলছে ২ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছেন পাবনার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা। দায়সারাভাবে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি থেকেই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। 

১৯৫৮ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ২৯ নং চর মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ৩১ নং গঙ্গাধরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নানা সমস্যায় জড় জড়িত বিদ্যালয় দুটিতে রয়েছে শিক্ষক সংকট। ৩১ নং গঙ্গাধরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের বিপরীতে রয়েছেন তিন জন। একই ভাবে ২৯ নং চর মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। অথচ সে শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না বিদ্যালয়টিতে। 

এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিদ্যালয় দুটির শিক্ষকরা দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নাম মাত্র পারিশ্রমিকের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে প্রক্সি শিক্ষক। এছাড়াও অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া প্রক্সি শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন। ফলে লেখা পড়া ছেড়ে শিশু শ্রমে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় অনেকে। 

সরেজমিনে চর মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তিন জন প্রক্সি শিক্ষকের দেখা মিলে, তারা ক্লাস নিচ্ছেন। পরবর্তীতে পাশেই অবস্থিত গঙ্গাধরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

গঙ্গাধরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় মো. ইউনুছ আলীসহ আরো অনেকে জানান, ভাড়াটে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েই এই স্কুল চলছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই বিদ্যালয়ের অবস্থান হওয়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে তাদের উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। চর মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রক্সি শিক্ষকরা জানান কিছু অর্থের বিনিময়ে আমরা মৌখিকভাবে নিয়োগ পেয়ে স্কুল পরিচালনা করছি। 

এ বিষয়ে ২৯ নং চর মাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানতে চাইলে তিনি প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের এখানে নিয়মিত ক্লাস করানো হয়। আপনাদের ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ৩১ নং গঙ্গাধরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কোহিনুর আলমের সাথে কথা বলে প্রক্সি শিক্ষকের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম আমার বিদ্যালয়ে প্রক্সি শিক্ষক আছে। আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আশা যাওয়া করি। তবে এর আগেও স্থানীয় কিছু ছেলেরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছিলো। আমরা নদী পার হয়ে আশি, হয়তো একটু দেরি হতে পারে তবে কোনো প্রক্সি শিক্ষক আমার বিদ্যালয়ে নেই। 

এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার এক সাক্ষাতকারে জানান, প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //