পানিশূন্য তিস্তা

কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

প্রায় পানিশূন্য তিস্তা, হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। প্রতিবছর নদীতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন চরাঞ্চল। পানিশূন্য তিস্তার দিকে তাকালে দেখে যায় ধু-ধু বালুচর। এক সময় পাখির কলকাকলিতে নদীর চারপাশ মুখরিত থাকলেও বর্তমানে যৌবন হারিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হচ্ছে দেশের বৃহৎ নদীটি।

জেগে ওঠা চরের কোনো এক পাশ দিয়ে ছোট নদী আকারে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। শীতের এই মৌসুমে নদী এলাকার জেলে ও কৃষিজীবী লাখো মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। তিস্তা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় চলতি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সিকিমস্থ হিমালয় পর্বতমালার পাহুন্দ্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্ট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে গেছে। নদীর উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ এবং বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প করায় নদী থেকে একতরফা পানি তুলে নেওয়ায় নদীর বাংলাদেশের অংশের বিস্তীর্ণ অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে ক্ষীণাকৃতি ধারণ করেছে।

এছাড়াও বাংলাদেশে প্রবেশের পর লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারেজ নির্মাণ করে এ নদী দিয়ে বয়ে আসা পানির গতি রোধের চেষ্টা করা হয়েছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত আটকে তুলে নেওয়া হচ্ছে পানি নামের জীবন। ফলে বাংলাদেশ অংশে নদীর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ পথের অধিকাংশ পথই শুষ্ক মৌসুমে থাকছে পানিশূন্য।

তবে বর্তমানের পানিশূন্য থাকা এই ধু-ধু বালুচরের তিস্তা বর্ষায় রূপ নেয় সর্বনাশী হিসেবে। গভীরতা কম থাকায় বর্ষাকালে অল্প পানিতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যার। যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী তীরবর্তী হাজারো বাসিন্দার বসতভিটা ও ঘরবাড়ি। ভেসে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। প্রতিবছর নতুন করে সংখ্যা বাড়ে ভূমিহীন পরিবারের।

চলতি মাসেই শুরু হয়েছে সেচনির্ভর ইরি-বোরোর চাষাবাদ। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধানের শীষ হেলে না পড়া পর্যন্ত সেচ দিতে হয় এই মৌসুমে। সে পর্যন্ত বোরো আবাদে সেচ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের সেচের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষকদের জন্য তিস্তার সেচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সময়ে তিস্তা প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় জেগে ওঠা জমির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ হেক্টর। এ বছর চাষাবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তবে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেগে ওঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাইরে রয়েছে এখনো। আর চাষাবাদকৃত জমিতেও পানি সংকট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদীন ইসলাম জানান, সেচপ্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। অথচ বর্ষা শেষ না হতেই গত ১০ দিনে গড়ে ব্যারেজের মূল গেটের পানি প্রবাহ রয়েছে ২৫ হাজার ৩০০ কিউসেক। যা দিয়ে তিস্তা ব্যারেজের সেচ কার্যক্রম শুরু করা কষ্টকর হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //