রোগের সঙ্গে বসবাস মাথাভাঙ্গা নদীর পাড়ের মানুষের

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী সংলগ্ন বড়বাজারে জবাই করা পশু, মুরগি ও মাছের রক্ত-বর্জ্য পচে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি উৎকট দুর্গন্ধে নদীর দু’পাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বসবাসকারীদের জীবনযাপনে দুর্ভোগের শেষ নেই। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, স্থানীয় পৌরসভা ও সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না। ফলে পরিবেশ বিপর্যস্থতার পাশাপাশি এলাকাবাসীদের শ্বাসকষ্ট, পেটে ব্যথা, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে এলাকায় ব্যাপক স্বাস্থ্যহানী ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। 

চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাজার। প্রবেশ মুখেই প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার পান বিক্রির হাট বসে। প্রধান সড়কের পাশে বসে মৌসুমি ও বিদেশি ফলের বাজার। এ বাজারে বিশেষ করে মাংস পট্টিতে রয়েছে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটি মাত্র ড্রেন দিয়ে শহর ও বাজারের ময়লা পানি গিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে পরে।

এদিকে দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর কোল ঘেঁষে চারিদিকে বর্জ্য আবর্জনা পড়ে থাকায় কাক, শকুন ও চিল ওইসব ঘাটাঘাটি করে আরো দুর্গন্ধ ছড়ায়। 

মাথাভাঙ্গা নদীর তীরের বাসিন্দা ফুলবানু, মহর আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী বলেন, নদীর দূর্ষিত পানিতে গোসল করার কারণে গায়ে চুলকানী হচ্ছে। পানিতে কাপড়চোপড় ধুলে তাতেও দুর্গন্ধ থেকে যায়। দুর্গন্ধের কারণে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যায় না। দিনে ও রাতে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। শারীরিক রোগ ব্যাধি কাটেই না। বাতাসে এত দুর্গন্ধে তাতে বসবাস করাই আমাদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কালু ও সবজি বিক্রেতা ইমতিয়াজ জানান, কসাইখানায় পর্যাপ্ত পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর জবাই করা পশুর রক্ত ও হাড় এবং ফেলে দেয়া মাংস, মুরগির নাড়িভুড়ি পচে দুর্গন্ধ আরো বাড়ছে। বাজারে এত দুর্গন্ধে যে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসতে চান না। এতে দিন দিন ক্রেতা কমে যাচ্ছে।

বড়বাজারের ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, এই বাজারে এত দুর্গন্ধে যে, এখানে বেশি সময় দাঁড়ানোই দুরূহ ব্যাপার। কেনাকাটা করতে এসে অস্বস্থিতে পড়তে হয়।

নীচের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ আলম জানান, এ বাজারে এক হাজারের বেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস নিতে হয় আমাদের। এতে বলা যায় রোগের সঙ্গেই আমাদের বসবাস।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, প্রবাহমান নদী হলেও জীব-জন্তু জবাই করা বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না। এটা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। এ নদীর পানি ব্যবহার করলে বড় ধরনের রোগ হতে পারে। তবে চামড়ার রোগ হবেই। যারা নদীর পান দূষণের কাজে জড়িত তাদের সচেতন করাতে হবে। তাতেও যদি না হয়, তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া বলেন, এটি পৌরসভা নিয়ন্ত্রিত একটি বিশাল বাজার। পৌরসভায় বসবাসরত বেশিরভাগ মানুষ এ বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের যে গন্ধ সেটা আমরা ঠিক মত ব্যবস্থা করতে পারছি না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব পেয়েছি। এখান থেকে বাজার ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলবে। সেটা পেলে এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে এ ভোগান্তী আর থাকবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //