পুষ্টিহীনতা বাড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে

বাগেরহাটের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধী, খর্বাকার ও কম ওজনের শিশু জন্ম দিচ্ছেন এসব এলাকার মায়েরা। অল্প বয়সে কর্মক্ষমতা হারানো ও বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার সমস্যা রয়েছে এসব মানুষের মাঝে।

যা জীবনযাত্রার উপর দীর্ঘ স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাবা-মায়ের মতো পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাতারে থেকে যাচ্ছে এসব শিশু। সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে প্রতিনিয়ত পুষ্টিহীনতা বাড়ছে এই জেলায়। এর সঙ্গে ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা, আর্থিক অসচ্ছলতা ও শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেছেন সচেতন মহল।

জাতীয় পুষ্টি পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় ৫ বছরের কম বয়সী ২১ শতাংশ শিশু কম ওজন সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। ২৭ শতাংশ খর্বাকার শিশু রয়েছে এই জেলায়। এর বাইরে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া সমস্যা রয়েছে ৭ শতাংশ শিশুর। 

এদিকে পুষ্টি পরিষদের বাইরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কাছে জেলার নাগরিকদের পুষ্টিহীনতা ও পুষ্টি সম্পর্কিত তেমন কোনো জরিপ নেই। কার্যক্রমও রয়েছে নামমাত্র। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আনুমানিক ধারণা অনুযায়ী বাগেরহাটের শরণখোলা, কচুয়া, মোংলা, মোল্লাহাট, মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুষ্টিহীনতার পরিমাণ বেশি। 

ভোলার চর এলাকায় পুষ্টিহীনতায় ভোগা হাজেরা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমার বয়স ৩২ বছর। কিন্তু যে কেউ দেখলে আমাকে ৫০ বছর বয়সী নারী বলে। আমার তিনটি বাচ্চাও খুব ছোট। এর মধ্যে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুষ্টি বিষয়টি অনেক জটিল কিছু না, খুবই সহজ বিষয়। পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। যার গরুর মাংস খাওয়ার সক্ষমতা নেই, সে মুরগি খাবে, মুরগি খাওয়ার সক্ষমতা নেই ডিম খাবে, ডিম খাওয়ার সক্ষমতা নেই ডাল খাবে।

বাজারের সবজি কিনে খেতে না পারলে, সে থানকুনির পাতা তুলে খাবে, ফেলে দেওয়া কলার মোচা তুলে এনে খাবে, ধান ক্ষেতের পাশে থাকা শাক খাবে, রাস্তার পাশের কচু শাক খাবে। মূলত মানুষের জানতে হবে যে, দামি খাবার না খেয়েও সুস্থ থাকা যায়। এই বিষয়টি শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে জানাতে হবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের সব দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মতো মানুষের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতের জন্য আলাদা বিভাগ গড়ে তুলতে হবে। যারা বিশেষভাবে মানুষকে পুষ্টি সম্পর্কে জানাবেন। সাধারণ মানুষ যদি পুষ্টি বিষয়ে জানতে পারে, তাহলে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে পুষ্টিহীনতা কমবে।

জেলা পুষ্টি উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাগেরহাটে পুষ্টিবিদের পদ নেই। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো জরিপও নেই। সাধারণ মানুষের পুষ্টি নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক জরিপ থাকলে ভালো হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //