বর্জ্যে সয়লাব সোনাদিয়া দ্বীপ

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

মহেশখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া বর্জ্য ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব বর্জ্যরে কারণে সমুদ্র সৈকত, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, বর্জ্য অপসারণ করা না হলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে মানবদেহসহ অন্যান্য প্রাণীর। এ থেকে উত্তরণে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন এক সঙ্গে কাজ করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কক্সবাজার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় ৯ হাজার একর আয়তনের ছোট্ট দ্বীপ ‘সোনাদিয়া’। একসময় দ্বীপটিতে মুক্তার চাষ হতো এবং তা সোনার দামে বেচা-বিক্রি হতো বলে দ্বীপের নামকরণ হয়েছে সোনাদিয়া।

প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর এই দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে প্যারাবন এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সমুদ্র সৈকত। একটা সময় সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার দৌড়ঝাঁপ ছিল। ছিল গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপের আনাগোনা। প্যারাবনে বসত বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিসহ শত প্রজাতির পাখির মেলা। কিন্তু এখন তার কিছুই নেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীপের পূর্ব পাড়া থেকে পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সৈকত প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরপুর। তবে এসব বর্জ্য কোন জায়গা থেকে আসে তার উৎস জানা নেই স্থানীয়দের।

প্রাথমিক কিছু উৎস শনাক্ত করতে পেরেছেন দাবি করে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে ভেসে আসা বর্জ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ৮০ শতাংশ বর্জ্য অপচনশীল। এই বর্জ্যগুলো এসেছে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও দূরবর্তী দেশগুলো থেকে।

সাগর-মহাসাগর একসঙ্গে জড়িত, তাই বর্জ্যগুলো বিভিন্ন উপায়ে সোনাদিয়া দ্বীপে এসে জড়ো হয়। ভেসে আসা বর্জ্যগুলো অপসারণ করা না হলে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হবে। মাইক্রো প্লাস্টিকগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মানুষের শরীরে প্রবেশ করবে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে।

নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মারা যাওয়া কচ্ছপ এবং বেশকিছু পাখির পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। প্লাস্টিকের কারণে সোনাদিয়ায় সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। বর্তমানে সোনাদিয়া দ্বীপে ৪৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে প্রাণ প্রকৃতির অনেক কিছুর বিলুপ্তি ঘটেছে। 

ইউএনডিপির গবেষণা প্রধান ড. রমিজ উদ্দিন জানান, ভেসে আসা এসব বর্জ্যরে কারণে সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ-প্রতিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে এখন আর কোনো পর্যটক যাচ্ছে না। উন্নয়ন প্রকল্প কয়েক দিনের মধ্যে চালু হবে, তখন সবকিছু পরিষ্কার করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //