পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮১

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-মুসল্লীদের সংঘর্ষ এবং গুজব ছড়িয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় ছয়টি পৃথক মামলা হয়েছে সদর থানায়। এতে এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পঞ্চগড় সদর থানার চার জন উপ-পরিদর্শক, একজন র‍্যাব কর্মকর্তা ও ওসমান আলী (৫৪) নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে সদর থানায় এসব মামলা করেন। ছয় মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার। 

এর আগে, গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। জুমার নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে এই বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের উপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। এ সময় পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়ে দেন। এছাড়া তাদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লিদের মধ্যে একজন নিহত হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে, শনিবার সন্ধার পর আবারও উত্তপ্ত হয় শহর। ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। হাতে লাঠিসোটা নিয়ে ‘নারায়ে তাকবির’ ধ্বনি তুলে তারা দুইভাগ হয়ে আহমদনগর ও তুলারডাঙ্গা এলাকার দিকে ছুটতে থাকেন। এ সময় পঞ্চগড় বাজারের কদমতলা এলাকার ওয়াকার শোরুম নামে একটি জুতার দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় একদল। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। 

পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৮১ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চলছে।