দেখা মিলল লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালির

খাগড়াছড়ির গভীর বনে ‘মহাবিপন্ন’ লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালির সন্ধান মিলেছে। এর আগে সাম্প্রতিককালে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো বনে এই কাঠবিড়ালির দেখা পাওয়া যায়নি। অন্তত দশ বছর আগে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এর দেখা মিলেছে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ‘ছলক’ নামে পরিচিত। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার গভীর বনে স্তন্যপায়ী এই কাঠবিড়ালির ছবি তুলেছেন এই প্রতিবেদক।

স্থানীয়রা জানান, এখানকার বৌদ্ধ বিহার এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ। বিহারের ভান্তে সবাইকে শিকারে নিরুৎসাহিত করে। তাই বন্যপ্রাণী এখানে নিরাপদে থাকে। ছলক (লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি) এখানে দীর্ঘদিন ধরেই আছে। সন্ধ্যার দিকে বের হয়। অনেক সময় সকালবেলায় দেখা যায়।

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ের তথ্য অনুসারে, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চোখ বড়। এদের দেহের রং মেহগনি-লাল। পায়ের পাঁচ আঙুল বাঁকানো ও পেছনের পায়ের সব কটি ও সামনের পায়ে ৪টিতে ধারালো নখ থাকে। এদের ঘন লোমযুক্ত ওড়ার পর্দা থাকে। পর্দার বিস্তৃতি হাতের কনুই থেকে পিছনের পা পর্যন্ত। এরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রসারিত কিংবা গুটাতে পারে। এর সাহায্যে তারা এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যেতে পারে। এদের বর্ণের তারতম্য ঘটতে পারে। দেহের উপরের দিক লেজের বেশিরভাগ কালো, কালচে-বাদামি।

এরা নিশাচর প্রাণী। শিকারের খোঁজে সন্ধ্যার সময় বের হয়। বাতাসে ভেসে বেড়িয়ে ৭৫ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠতে সক্ষম। গভীর বনাঞ্চলে এদের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রজনন মৌসুমে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা দেয়। উড়ন্ত কাঠবিড়ালির বাচ্চা আড়াই মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। 

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ের তথ্য অনুসারে, ধারণা করা হয় যে এরা বছরে দুবার যৌন সঙ্গম করে; বাচ্চা প্রসব করে সাধারণত মার্চের শুরু থেকে আগস্টের প্রথমভাগ পর্যন্ত। এরা ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা বড় গাছের কোটরে বসবাস করে। 

বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি দুর্লভ। সবশেষ বছর দেড়েক আগে শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্ধার করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামেও লাল কাঠবিড়ালি দেখা যায়। তবে খুবই কম। বাংলাদেশ দেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, চীন, পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে এদের দেখা যায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //