রমজানে সংসার চালানো নিয়ে শঙ্কায় সাধারণ ক্রেতারা

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। তবে রমজান শুরুর আগেই বরিশালের বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিমের মূল্য নিম্ন এবং মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে।

ক্রেতারা বলছেন, গত বছর রোজার সময়ের চেয়ে এবার এই দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এদিকে বাড়তি দামের কারণে অতিষ্ঠ বিক্রেতারাও। তারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় বেশি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে। কিন্তু লাভ তেমন বাড়েনি। অন্যদিকে ক্রেতাদের সঙ্গে এসব নিয়ে রোজই বচসা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার ৩৪০ ও সোনালী ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই দামেই মুরগি বিক্রি হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন ওই বাজারের শরীফ পোল্ট্রি কর্নারের কর্মচারী সোহেল।

একই বাজারের ডিম ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, রোজা শুরুর ৪-৫ দিন আগেই ডিমের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে ফার্মের হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৭০ টাকা এবং মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। আগে হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৬০ ও ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হতো ৪০ টাকায়।

ক্রেতা রবিউল আলম বলেন, বাজার করমু ক্যামনে। আগে ৫০০ টাকার বাজার করলে যেভাবে চলতো। এখন এক হাজার টাকায় তা হয় না। সব জিনিসের শুধু দাম।

একই রকমের কথা হাসনাহেনা বেগমেরও। তিনি বলেন, স্বামী অসুস্থ। সঞ্চয়পত্রের টাকা দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু বাজারের দামের সাথে তো আমার আয় বাড়েনি। রমজান মাসে ক্যামনে কী করমু? আমাগো কথা কি কেউ ভাবে?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, আমরা উন্নয়নের নামে রাজনৈতিক নেতাদের শুধু বিজ্ঞাপনী ভাষণ শুনছি। কিন্তু বাজারের বাস্তবতা ভয়াবহ।

জানা গেছে, ২০২২ সালে রোজা শুরু হয় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে। ওই সময় গরুর মাংসের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬৫০-৬৮০ টাকা। এ বছর রোজার আগেই গরুর মাংস ৭০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

এছাড়া খাসি ১,০০০ ও বরকি ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর মাংসের দাম ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চৌমাথা বাজারের হাফিজ মিট হাউজের মালিক হাফিজ।

অপরদিকে, নগরীর পোর্ট রোড বাজারের পোল্ট্রি মুরগি ব্যবসায়ী সুমন জানিয়েছেন, গত বছরের থেকে দ্বিগুণ বেশি দামে এবার বয়লার মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। গত বছর রোজায় বয়লার মুরগির দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা। এ বছর বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়।

এদিকে, গত বছর সোনালী ও লেয়ার মুরগির দাম ছিল ২৭০ টাকা কিন্তু এ বছর রোজা শুরুর আগেই ৩৫০ এবং ৩৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার বয়লার প্রায় ১০০, সোনালী ও লেয়ার ৮০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর গত বছর ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি হালি যেখানে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে এ বছর তা ১১ টাকা বেশি দামে ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

নগরীর বাজার রোডের পোল্টি ব্যবসায়ী সুমন বলেন, এ বছর পল্ট্রি খাবারের মূল্য বেশি। এ কারণে মুরগির দামও বেশি। তবে রোজার মাঝামাঝি বা ঈদের আগে দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে, মাছের বাজারেও দেখা গেছে দামে আগুন। পোর্ট রোড, রূপাতলী এবং সাগরদী বাজারে বড় আকারের ইলিশ ১২০০ থেকে ২২০০টাকা কেজি, ছোট ইলিশ ৬৫০ থেকে ৭৫০, পোয়া মাছ ১৪০ থেকে ২০০ টাকা ও তপসে মাছ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া সুরমা ২০০, রুই ২৫০-৩০০, বড় চিংড়ি ১,০০০ থেকে ১২০০, ছোট চিংড়ি ৮০০, কাতল ৩৭০, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, ছোট পাঙ্গাস ২০০, নদীর বড় পাঙ্গাস ১,০০০ থেকে ১,২০০, কই এবং সিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

মাছ ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, এ বছর মাছের দাম গত বছরের থেকে বেশি। তাছাড়া বর্তমানে নদীতে ইলিশ রক্ষার অভিযান চলছে। এ কারণে কোন মাছ ধরা যাচ্ছে না। তাই ইলিশের সাথে সাদা বা দেশি মাছের দাম বেশি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //