লিগ্যাল এইড অফিসে আস্থা বাড়ছে, কমছে মামলার জট

আদালতের বিচারাধীন মামলার জট কমাতে ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় আইনি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস চালু করে বিচার বিভাগ। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অধীনে জেলা পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীদের সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্বল্প সময়ের বিরোধ নিষ্পত্তি, সফল মীমাংসা ও আদালতে বিচারাধীনের মামলা আপসে প্রত্যাহারসহ নানা সেবা কার্যক্রমের কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে রাঙামাটিতে লিগ্যাল এইড সেবা। এতে করে একদিকে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের লিগ্যাল এইড সেবায় আস্থা বাড়ছে অন্যদিকে আদালতে কমে আসছে মামলা জট।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে রাঙামাটিতে লিগ্যাল এইড অফিস চালু হলেও বিচারক সংকটে উল্লেখজনক হারে আবেদন গ্রহণ ও মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। ২০১৯ সালে প্রথম শেখ মোহাম্মদ বদিউল আলম নামের একজন বিচারিক যোগদান করেন। এরপর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বিচারক হিসেবে সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিগত ১৪ মাসে রাঙামাটি কার্যালয়ে ১ হাজার ২০৫টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৫টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। 

বিরোধ আপসের ফলে ১ কোটি ২২ লাখ ৪ হাজার ৯৪ টাকা টাকা আদায় এবং ৪২০টি দেওয়ানি, ফৌজদারি ও পারিবারিক মামলা মীমাংসা হয়েছে। মামলার মীমাংসা হার ৩৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া আইনি পরামর্শ নিয়েছেন ১ হাজার ১৭৫ জন এবং আদালতে বিচারাধীন ১০১টি আপসে মীমাংসার ফলে প্রত্যাহার হয়েছে। এছাড়া জেলার দশ উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলা ও ২৮টি ইউনিয়নে লিগ্যাল কমিটি গঠন ও সক্রিয় করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ১৬টি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া কারাবন্দিদের সঙ্গে বৈঠক এই সেবার অন্যতম দিক।

রাঙামাটি লিগ্যাল এইড অফিসের অন্যতম উদ্যোগ হলো বিরোধপূর্ণ জমিতে গিয়ে মীমাংসা বৈঠক। যা দেশে প্রথম রাঙামাটিতেই শুরু হয়েছে। পরে বেশ কয়েকটি জেলায়ও এই কার্যক্রম চলছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চল হওয়ায় এ কার্যক্রমের আওতায় ১৪৫টির অধিক বিরোধপূর্ণ জমিতে গিয়ে মীমাংসা বৈঠক করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জনসাধারণের আপসে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এর চেয়ে বিকল্প আর পথ নেই। লিগ্যাল এইডের সেবা পেয়ে মানুষকে ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তি, আপসে মীমাংসার জন্য এটা সরকারের অনন্য উদ্যোগ। বিরোধপূর্ণ জমিতে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা আরও সহজতর হচ্ছে।

সেবা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ বলেন, ২০১৫ সাল থেকে রাঙামাটি লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম শুরু হলেও আমি ২০২২ সালের শুরুর দিকে এখানে যোগদান করি। আমরা সাধারণত মানুষকে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় কেউ কোনো মামলায় অভিযুক্ত হলে তার যদি আর্থিক সংকটে মামলা চালানোর সক্ষমতা না থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা পরিচালনা করি। এছাড়া আপসে বিরোধ নিষ্পত্তি ও আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোনো ব্যক্তি জেলা লিগ্যাল অফিস থেকে বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ পাবেন। 

তিনি আরও বলেন, এখানে মূলত জমি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক বিরোধ দেনমোহর ও ভরণপোষণ সংক্রান্ত এবং আপসযোগ্য ফৌজদারি মামলা আমরা আপসে মীমাংসা করে থাকি। প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে জুনাইদ বলেন, আমাদের যাতায়াতের কোনো যানবাহন নেই এবং পর্যাপ্ত জনবলের সংকট রয়েছে। সার্ভেয়ারসহ যদি জনবল সংকট ও পরিবহন সংকট নিরসন হয় সে ক্ষেত্রে আমরা বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য আরও বেশি কাজ করতে পারব। 

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা বলেন, আদালতের মামলা জট কমানোর পক্ষে লিগ্যাল এইডের তৎপরতা অনেক ভালো। লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম এভাবে চলমান থাকলে আদালতের মামলা জট আরও অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে এখানকার মানুষেরা অনেক দরিদ্র। তারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //