মেঘনার বুকে নতুন চর

প্রভাব পড়ছে ইলিশে

লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীতে নতুন ভাসমান ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। এতে লঞ্চ, ফেরি এবং সাধারণ নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ডুবোচরের কারণে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নতুন চর জেগে ওঠায় নদীর স্বাভাবিক জোয়ারে পানি উপকূল এলাকাগুলোতে ঢুকে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে বহু জনপদ, ভাঙছে নদীর তীর।

মেঘনাপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা, ফেরি ও লঞ্চ চালক, জেলে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। মেঘনার বুকে জেগে ওঠা এসব চরে নতুন স্বপ্ন না দেখে এসব চর ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, মেঘনা নদীর অববাহিকায় জেগে ওঠা এসব চর দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। নতুন চর জেগে নদীর তলদেশে ঢাল তৈরি হয়েছে। এতে পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। পানি স্বাভাবিক নিয়মে প্রবাহিত হতে না পেরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নদীর তীরে। এতে পাড় ভাঙছে এবং লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিসির কার্যালয় থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা রুটে নৌযোগাযোগ ঠিক রাখতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২৫ কিলোমিটার নদীপথ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই বছর ডিসেম্বর মাসে মজু চৌধুরীর হাট থেকে চর রমণী মোহন এলাকায় মেঘনার লোয়ার চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজু চৌধুরীহাট এলাকার জেলে সাজু মাঝি, হোসেন এবং কমলনগর উপজেলার জেলে সিরাজ। তারা তিনজন মেঘনায় প্রায় ৪০ বছর যাবৎ মাছ ধরেন। তারা জানান, মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর অংশে প্রচুর নতুন চর পড়ছে। লক্ষ্নীপুরের উত্তর সীমানা চর ভৈরবী থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ একটি চর দৃশ্যমান রয়েছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার প্রস্থের এ চরটি বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। 

কমলনগর এলাকায় মাতব্বরহাট, নাসিরগঞ্জ, পাটারিহাট, লুধুয়া, বালুর চর এলাকায় একটি করে নতুন চর জেগে উঠেছে। কমলনগরের মতিরহাট থেকে রামগতির টাংকি বাজার পর্যন্ত অন্তত আরও ৬টি বড় বড় ডুবোচর রয়েছে। যেগুলো বর্ষায় দেখা না গেলেও শীত মৌসুমে ভাটার সময় দেখা যায়। পুরো মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর সীমানায় এখন অসংখ্য চর।

মতিরহাট ঘাটের মাছের আড়তদার মিছির আহমেদ জানান, বর্তমানে মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশের জন্য জেলেদেরকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে যেতে হচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ এনে জেলেরা নদীর ঘাটে বিক্রি করছে। পুরো শীত মৌসুমে মেঘনায় ইলিশ তেমন পায়নি জেলেরা। দু-চারটি করে ইলিশ পাওয়ায় নৌকার জ্বালানি খরচও ওঠে না।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। সামনে এ অবস্থা চললে মেঘনা ইলিশশূন্য হয়ে যাবে। নদীতে চর পড়ে গেছে এবং পানি কমে গেছে। তাই ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। পানি বাড়লে ইলিশের পরিমাণও বাড়বে।

এদিকে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরগুলো পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেন স্থানীয়রা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //