চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, সতর্ক করতে মাইকিং

চুয়াডাঙ্গায় টানা ১৪ দিন তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই তাপপ্রবাহে জনসাধারণকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে।

আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় তীব্র তাপপ্রবাহেও চুয়াডাঙ্গা শহরের চৌরাস্তার মোড়ে পুলিশ বক্স ঘেঁসে একটি রিকশাভ্যানে কিছু আনারস নিয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের রহমানের ছেলে মিলন (৪০)। প্রচণ্ড গরমে তার আনারস বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে তিনি জানান। এ কারণে আয় রোজগার খারাপ হওয়ায় তার সংসার চালানো কষ্টকর হচ্ছে।

ঠিক এমনটিই বলেন, রিকশাওয়ালা শুকুর আলী। তিনি বলেন, ক্রমাগত গরম পড়াই রিকশা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সংসার খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আবার রোজার মাস চলছে। শহরে মানুষের চলাচল কম হওয়ায় ভাড়া একেবারে নেই বললেই চলে।

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালক ও কৃষক। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুর। রাস্তায় ভাড়া পাচ্ছে না রিকশা-ভ্যান চালকরা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে বোরো ধান ও সবজি ক্ষেতে।

বোয়লমারী গ্রামের কৃষক মফিজুর বলেন, ধানে সেচ দিয়ে আর পারছি না। দাম বেশি ডিজেলের। ডিজেল কিনতে গিয়ে আর পেরে উঠছিনা। খুবই কষ্টে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় গত ২ এপ্রিল থেকে দিন জুড়ে টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এ জেলায় বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থা নাজুক, তারা নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর শুয়ে বসে দিন অতিবাহিত করছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রথমশ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। বেলা যত বাড়ছে রোদের তীব্রতা তত বাড়ছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনের তাগিতে কেউ কেউ ঘর থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হলেও, কাজ শেষে দ্রুত ঘরে ফিরে যাচ্ছে। কাঁচা তরিতরকারিসহ অন্যান্য বাজারে ক্রেতাদের ভিড় নেই। ঈদ বাজারে ক্রেতা যৎসামান্য দেখা যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রচণ্ড গরমে ঈদের বাজার মন্দা, দুপুরে ও সন্ধ্যার পর ক্রেতারা ভিড় করছে ঠিকই, কেনাকাটার জন্য নয়, দেখাদেখিতে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জেলার সর্বত্র জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ যাতে ঘর থেকে বের না হয় সে ব্যাপারে। এছাড়া হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে, সেকারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ যেনো ঘরের বাইরে বের না হয় সে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রোজাদারদের ইফতারির পর পর বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের যারা রোজাদার নন, তাদেরকে ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গার প্রথমশ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জেলায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ দুপুর ১২টায় এ জেলায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এদিন বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি ও এদিন বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৭ দশমিক ৭ ও বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৩৭ ও বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। রবিবার (৯ এপ্রিল) জেলায় দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টায়  ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এবং রবিবার (২ এপ্রিল) দুপুর ২টায় ৩১ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।

ইনচার্জ জামিনুর রহমান আরো বলেন, প্রতিদিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হচ্ছে। গত ১৪ দিন ধরে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //