আত্মসর্মপণ করলেন তিন শতাধিক চরমপন্থি

চরমপন্থিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ২০২০ সাল থেকে র‍্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনায় র‍্যাব-১২ কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে র‍্যাব চরমপন্থিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং চরমপন্থিদের পরিবারের সদস্যদেরকে হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করে।

র‍্যাবের সময়োপযোগী এ সকল উদ্যোগ গ্রহণের ফলে চরমপন্থি পরিবারের সদস্যরা অনুপ্রাণিত হয় এবং বিভিন্ন চরমপন্থি দলে থাকা সদস্যদেরকে তাদের পরিবারের পক্ষ হতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। পরবর্তীতে র‍্যাব ফোর্সেস চরমপন্থিদের পরিবারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে চরমপন্থিদেরকে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহী করে এবং সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে।


এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার র‍্যাব ফোর্সেসের তত্ত্বাবধানে সিরাজগঞ্জে অবস্থিত র‍্যাব-১২ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী জেলার তিন শতাধিক চরমপন্থির সদস্য ০২ শতাধিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, সিরাজগঞ্জ- ০১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ- ০২ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত, সিরাজগঞ্জ- ০৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ- ০৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-০৬ আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার) পিপিএম, র‍্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন, বিপিএম (বার) সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক-মীর মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, সিরাজগঞ্জ প্রমুখ।


বর্তমান সরকার আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থিদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থিদের আইনগত সহযোগিতাসহ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করার প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা জানেন ৮০'র দশক থেকে এই এলাকার কয়েকটি জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সর্বহারা ও চরমপন্থিরা ঘাঁটি তৈরি করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘সন্ত্রাসের জীবন ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ স্লোগানে সর্বহারা চরমপন্থিরা আলোর পথে ফিরে আসে। প্রধানমন্ত্রী তখন যেমন সবাইকে পুনর্বাসন করেছিলেন তেমনই আজকেও আমাকে সহযোগিতার কথা বলেছেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল অপরাধীদের হুঁশিয়ারি করে বলেন, কেউ যদি মনে করেন আমরা দুর্গম এলাকায় বসে থাকবো, অপরাধ করবো আর আপনারা ধরতে পারবেন না তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এছাড়াও বিপথগামীদের ফেরাতে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পর্যন্ত করে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত ঘোষণা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, র‍্যাব নানাবিধ ভালো কাজ করে যাচ্ছে, আস্থা অর্জন করেছে। এ জন্যই চরমপন্থিরা আত্মসমর্পণের জন্য র‍্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। র‍্যাব আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নানান মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


অনুষ্ঠানে র‍্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি জনাব এম খুরশীদ হোসেন, বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, দেশের সাধারণ জনসাধারণের কাছে র‍্যাব ফোর্সেস যেমন আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক তেমনি সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের জন্য র‍্যাব ফোর্সেস মূর্তিমান আতংক। যে সকল চরমপন্থি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানান র‍্যাব মহাপরিচালক। যারা আত্মসমর্পণ করেনি তাদেরকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, যারা অপরাধ/সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র‍্যাব।

এসময় তিনি আরো বলেন, আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে স্বাভাবিক পেশায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে ‘উদয়ের পথে’ নামক পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রায় অর্ধ শতাধিক সর্বহারা পরিবারের মহিলা সদস্যদেরকে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার জন্য কার্যক্রম চলমান রেখেছে র‍্যাব। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র‍্যাব ফোর্সেস কর্তৃক আত্মসমর্পণকৃত বিভিন্ন চরমপন্থি দলের নেতা ও সদস্যদের আর্থিক প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক পেশায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একইভাবে আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থিরা যেন পুনরায় তাদের পুরনো পেশায় ফিরে না যায় এবং নতুন করে কোন অপরাধে না জড়ায় সে ব্যাপারে তাদের উপর র‍্যাবের নজরদারী অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি এখনো যারা আত্মসমর্পণ না করে নিজেদের অপরাধের সাথে জড়িয়েছে র‍্যাব ফোর্সেস তাদের সাথেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে; তারা যেন অপরাধ জীবন ছেড়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। চরমপন্থি নির্মূলে এই সৃজনশীল ও সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করা চরমপন্থিরা স্বাভাবিক পেশায় তাদের জীবিকা নির্বাহ করবে যাযাবর জীবন থেকে ফিরে পাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //