স্বামীর কাছ থেকে সন্তানকে ফিরে পেতে মায়ের আকুতি

বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। ভেবেছিলেন সন্তান হলে স্বামী আর নির্যাতন চালাবে না। তা আর হয়নি। সবশেষ যৌতুকের ৫ লাখ  টাকা দিতে না পারায় ৮ মাসের শিশু সন্তানকে রেখে নাজমিনকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বাবার বাড়িতে। এমন অভিযোগ উঠেছে স্বামী কাওসার আহম্মেদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয় নিজ এলাকায় আজ রবিবার (২১ মে) দুপুরে সাংবাদিকদের তথ্য দেন ছোট শিশু আলিশবা মা নাজমিন।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার ভ্যানচালক ফেরদাউস বেপারীর মেয়ে নাজমিনের সাথে দুই বছর আগে ডাসার উপজেলার দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের ইদ্রিস মুন্সীর ছেলে কাওসার আহম্মেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন ভালো কাটলেও তারপর থেকে নানাভাবে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে নাজমিনের পরিবারকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ভ্যানচালক ফেরদাউস বেপারী ৩ লাখ টাকা মেয়ে জামাই কাওসারের হাতে তুলে দেন। কিছুদিন পর তাদের সংসারে আলিশবা নামে এক কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।

গত ১৪ মার্চ (মঙ্গলবার) আবারো নাজমিনের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে কাওসার।  পরিবার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শিশু আলিশবাকে রেখে নাজমিনকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন কাওসার। এরপর থেকে স্বামী কাওসারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি নাজমিন ও তার পরিবার। পরে উপায় না দেখে সন্তানকে ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এদিকে ঘটনার ২ মাস হয়ে গেলেও নাজমিন জানে না তার সন্তান কেমন এবং কোথায় আছে।

ভুক্তভোগী নাজমিন বলেন, আমি আমার স্বামীর সাথে সংসার করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী যৌতুকের জন্য মারধোর চালাত। অনেক কষ্ট করে মুখ বুঝে সহ্য করছিলাম। কিন্তু টাকার জন্য ওনি আমার দুধের বাচ্চাটারে রেখে আমাকে তাড়িয়ে দিলো। আমি আমার বাচ্চাটাকে ফেরত চাইলে আমাকে মেরে ফেরার হুমকি দেয়। আজ ঘটনার দুই মাস হয়ে গেছে কিন্তু আমার বাচ্চার কোনো খোঁজ নাই। আমি আমার বাচ্চা ফেরত চাই।

নাজমিনের মা লাকী বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে ধারদেনা করে মেয়ের সুখের জন্য জামাইরে টাকা দিছি। কিন্তু তারপরও সে আরো টাকা চায়। আমরা গরীব মানুষ এতো টাকা কোথায় পাবো। আমার নাতনিকে রেখে মেয়েকে বাড়ি পাঠাই দিছে। আমার মেয়েটা ওর বাচ্চার জন্য দিনরাত কান্না করে। আইনের কাছে একটাই অনুরোধ ওর বাচ্চাটা ওর কাছে ফেরত দেওয়া হোক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাওসার আহম্মেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। নাজমিন নিজেই বাচ্চা রেখে চলে গেছে। বর্তমানে আমার মেয়ে আমার কাছে রয়েছে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকার পারিবারিক আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আদালত সিদ্ধান্ত নিবে বাচ্চা কার কাছে থাকবে।

এ বিষয়ে ডাসার থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই সংক্রান্ত বিষয়ে  আদালতে থেকে শিশুটিকে খুঁজে বের করার জন্য আমার কাছে একটি তল্লাশি পরােয়ানা দেওয়া হয়েছিল। তবে বাসায় গিয়ে মামলার প্রধান আসামি কাওসার আহম্মেদ ও শিশু আলিশবাকে পাওয়া যায়নি। যা আমি আদালতকে অবগত করেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //