নদীতে চলছে রমরমা বালু বাণিজ্য

পাবনা জেলার পূর্ব-উত্তর-দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার বসিয়ে ভূ-অভ্যন্তর থেকে সাদা সোনা খ্যাত বালু তোলা হচ্ছে। এতে ভূ-অভ্যন্তরের কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসায় ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দিনে প্রশাসন তৎপর থাকায় বালুদস্যুরা গভীর রাতে ড্রেজারের বাতি নিভিয়ে বালু তুলছে।

পাবনা জেলার পূর্ব, উত্তর, দক্ষিণপ্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, যমুনা, বড়াল ও হুড়াসাগর নদী থেকে ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা ও তাদের আত্মীয়-স্বজন প্রকাশ্যে বালু তুলে বিক্রি করে আসছে। তারা শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে নদীর তলদেশের ২০-২৫ ফুট গভীর থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু তুলছে। 

এতে নদী পাড়ের গ্রামগুলোর বাসতবাড়ি, ফসলি জমি, তীর সংরক্ষণ কাজ ও পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রেল স্টেশন, পূর্ব-পশ্চিম জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের টাওয়ার ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। যমুনা, পদ্মা, বড়াল ও হুড়াসাগর নদী পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে বালু বেচা-কেনার হাট বসেছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু কেনা-বেচা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, জেল জরিমানাতে থামছে না অবৈধভাবে বালু তোলা। বিনা পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় প্রভাবশালী বালুসন্ত্রাসীরা জেল জরিমানা উপেক্ষা করে নদী থেকে বালু তোলাসহ প্রকাশ্যে বেচা-কেনা অব্যাহত রেখেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীরা জানান, বালু বিক্রি টাকার ভাগ অনেকেই পাচ্ছে। সেজন্য চিহ্নিত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণেই পাবনার ৪টি নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ হচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেছেন। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, পাবনা সদরের চর-ভগিরাতপুর, হেমায়েতপুর, চরতারাপুর, দোগাছী, ভাঁড়ারা, ফরিদপুর উপজেলার বড়াল নদীর ড়েমরা ঘোষপাড়া, সাঁথিয়ার পাথালিয়া হাট, চিথুলিয়া, হুড়াসাগর নদের বেড়ার অধীননগর, মোহনগঞ্জ যমুনা নদীর পেঁচাকোলা, নটাখোলা, খানপুরা এবং পদ্মা নদীর ঢালারচর রেল স্টেশন, সুজানগর উপজেলার চরভবানীপুর, নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, বাঠপাড়া, রাইপুর, গোপালচন্দ্রপুর, হাসামপুর, বর্খাপুরসহ পদ্মা ও যমুনার নদীর ২৬টি পয়েন্টে ড্রেজার, ভলগেটের সাহায্যে নদীর তলদেশে থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে নদীর তলদেশ তছনছ হয়ে গেছে।

এতে স্রোতধারা গতিপথ পরিবর্তন করায় গত এক বছরে নদী ভাঙনে অসংখ্য বসতবাড়ি, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দিরসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কাজীরহাট ও নটাখোলা এলাকায় এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। 

বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, ভাঙন প্রতিরক্ষা কাজের পাশ দিয়ে যমুনা ও পদ্মা নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর যে কোনো পয়েন্ট থেকে বালু তোলায় প্রতিরক্ষা কাজের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। নদীর যে স্থান থেকে বালু তোলা হয় তার চার পাশে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য প্রশাসনকে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //