ভাত চুরির অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি

বগুড়ায় ভাত চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে যুবককে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়ার চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অথচ গণপিটুনির শিকার বগুড়ার বারপুর মধ্যপাড়ার শফিকুর রহমানের ছেলে সাব্বির হোসেন বলছেন, এর আগেও ক্ষুধা লাগায় ওই বাড়ি থেকে ভাত চুরি করে খেয়েছেন। আবার বাড়ির গৃহকর্ত্রীও বলছেন এর আগে রান্না ঘর থেকে শুধু ভাত ও তরকারি চুরি হয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাত চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত সাব্বিরকে যারা গণপিটুনি দেয় তারা পুলিশের ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। ঘটনাস্থল পুলিশ সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন এবং বিষয়টি নজরে রয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মে রাত প্রায় ১১ টার সময় বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের বারপুর লাইলিপাড়া গ্রামের মৃত আবু ইউসুফের দোতলা বাড়ির রান্না ঘরের জানালা দিয়ে পাতিলের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় নির্যাতনের শিকার সাব্বির হোসেন। এসময় কোন কিছুর শব্দে বাড়ির গৃহকর্ত্রী মৃত আবু ইউসুফের স্ত্রী নানজিন আকতার বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। সাব্বির পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী তাকে আটক করেন। পরে তাকে হাত-পা বেঁধে গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেন। এই নির্যাতনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দাবি সাব্বির মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাদকসেবী। মাদকসেবনের কারণেই তার নিজ বাড়িতে জায়গা হয়নি।

নির্যাতনের শিকার সাব্বিরের নানি মরিয়ম বেগম জানান, সাব্বির কাঠের রং মিস্ত্রি। তিনি নিয়মিত এলাকায় কাঠের রং করে থাকেন। তার বাবা-মা আলাদা থাকেন। ছোটবেলা থেকে সাব্বির তার কাছেই থাকেন। ঠিকমত সব্বিরকে ভাত দিতে পারেন না। ভাত থাকলে তাকে দেন, না থাকলে দিতে পারেন না। কিন্তু ভাত চুরির অভিযোগে মারপিট করা ঠিক হয়নি।

বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, শুনেছি সাব্বির মানসিক ভারসাম্যহীন। এ কারণে তাকে নিয়মিত কাঠের রংয়ের কাজ সহজে কেউ দিতে চায় না। সাব্বিরকে চোর সন্দেহে নির্যাতন করেছে। তবে এটা করা ঠিক হয়নি।

বাড়ির গৃহকর্ত্রী নানজিন আকতার জানান, কয়েকবার রান্নাঘর থেকে ভাত ও অন্যান্য খাবার চুরি হয়েছে। চুরি রোধে রান্না ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখতেন। ২২ মে সোমবার রাতেও ভাত চুরির চেষ্টা করা হচ্ছিল। রান্না ঘরে হাত দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেন। সে সময় দেখে ফেলায় ভাত নিতে পারেনি। পরে গ্রামের লোকজন তাকে আটক করে মারধর করেন। কে বা কারা ভিডিও করেছেন তা তার জানা নেই। 

গণপিটুনির শিকার সাব্বির জানান, তিনি কাঠের রংয়ের কাজ করেন। প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগায় তিনি ওই বাড়িতে ভাত চুরি করে খেতে গিয়েছিলেন। এর আগেও ওই বাড়ি থেকে ভাত চুরি করে খেয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। এবার ধরা পড়ায় গ্রামবাসী তাকে বেঁধে মারধর করে ছেড়ে দিয়েছেন। 

সাব্বির বলেন, তিনি ভুল করেছেন। সে কারণে নির্যাতন করেছে। পরে ছেড়েও দিয়েছে। তারা তো ইচ্ছে করলে পুলিশে দিতো পারতেন। তা করেননি। সে কারণে তার কোনো অভিযোগ নেই। তারা ক্ষুধার কথা জানতে পেরে পরে তাকে আবার রুটি-কলা খেতে দিয়েছিল। কোন অভিযোগ বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না বলে জানান।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার জানান, এভাবে নির্যাতন কেউ কাউকে করতে পারে না। এজন্য থানা পুলিশ বা আইন আদালত রয়েছে। ফেসবুকে সাব্বিরকে নির্যাতনের ভিডিওটি দেখে অমানবিক মনে হয়েছে। এমনভাবে কেউ নির্যাতন করতে পারে না। নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //