বরিশালে ৩২ কাউন্সিলর প্রার্থী অর্ধশতাধিক মামলার আসামি

আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে ১৩৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। তাদের মধ্যে ৩২ জন বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন, মাদক এবং হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন অপারাধে ফৌজধারী আইনে মামলা রয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের দাখিলকৃত হলফনামা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন বা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

তবে মামলায় আসামি হয়েও জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এসব প্রার্থীদের বর্জনের কথাও বলছেন অনেক ভোটার।

জানা গেছে, আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে গত ১৮ মে। বাছাই শেষে ১৩৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে তাদের মধ্যে ৩২ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৬০টির অধিক মামলা।

তাছাড়া মামলায় জড়িয়ে কারাগার থেকে যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল না করা বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্নার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৬টি মামলা।

এছাড়া ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম হলফনামায় মামলার বিবরণ গোপন করায় তার মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্ভাব্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দাখিলকৃত হলফনামার সাথে সেগুলো মিলিয়ে যাচাই বাছাই করা হয়েছে। সেখানে ৩২ জনের বিরুদ্ধে চুরি, মাদক, ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, অপহরণ, মারামারি, হত্যার চেষ্টা, সন্ত্রাসি, সংঘবদ্ধ হামলা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাদের দায়ে মমলা রয়েছে। তবে এদের মধ্যে কেউ জেল খেটে জামিনে, আবার কেউ আদালতে হাজির হয়ে জামিনে রয়েছেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কোতয়ালী মডেল থানা এলাকার সর্বোচ্চ ২০ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা রয়েছে। এয়ারপোর্ট থানা এলাকার ৬ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১৮টি এবং কাউনিয়া থানা এলাকার ৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে।

এদের মধ্যে কয়েকজন প্রার্থীর নামে ৩ থেকে ৫টি পর্যন্ত মামলাও রয়েছে। আবার ৪টি মামলায় খালাস পেয়েছেন এবং ৩ মামলা এখনো বিচারাধীন এমন প্রার্থীও রয়েছেন।

এদিকে, হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আউয়াল মোল্লার বিরুদ্ধে ২টি, জিহাদুল ইসলাম জেহাদের নামে একটি, সৈয়দ সাইদুল হাসান মামুনের নামে ৫টি করে মামলা রয়েছে।

এছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৩টি মামলা। যেগুলো বর্তমানে হাইকোর্টে স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।

৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কেফায়েত হোসেন রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাদ দমন ট্রাইব্যুনাল।

তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে মামলার বাদী। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আনোয়ার হোসেন ছালেকের বিরুদ্ধে রয়েছে ২টি মামলা।

অপরদিকে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আকতার উজ্জামানের বিরুদ্ধে ১টি এবং কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপুর নামে একটি করে মামলা রয়েছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের টানা পাঁচ বারের কাউন্সিলর মো. সেলিম হাওলাদারের বিরুদ্ধেও রয়েছে ২টি মামলা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ১টি এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন ভুলুর বিরুদ্ধেও ১টি করে মামলা বিচারাধিন রয়েছে।

১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাকিল হোসেন পলাশের নামে থাকা একটি মামলা হাইকোর্টে স্থগিতাবস্থায় রয়েছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. আবদুল কাদের শামীমের বিরুদ্ধে রয়েছে ২টি মামলা।

১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাহিন সিকদারের নামে ২টি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আকতার উজ্জামান গাজী হিরু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. জাবের আবদুল্লাহ সাদী ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের নামে একটি করে মামলা বিচারাধিন রয়েছে।

২১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাঈদ আহমেদ মান্নার নামে থাকা ৩টি মামলার মধ্যে একটি খালাস, একটি স্থগিত এবং একটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। একই ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা মু. শাহরিয়ার সাচিব রাজিবের নামে ৩টি মামলা রয়েছে।

সব ওয়ার্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা ছিল ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহারের নামে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মামলা ছিলো। যার মধ্যে একটি মামলা এখনো চলমান থাকলেও বাকিগুলো থেকে অব্যাহত পেয়েছেন তিনি। একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শামীম খান আজাদের নামে একটি এবং মিজানুর রহমানের নামে থাকা ৩টি মামলার মধ্যে একটি হাউকোর্টে স্থগিত ও ২টি চলমান রয়েছে।

২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাফিন মাহমুদ তারিকের বিরুদ্ধে একটি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলা গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য অপেক্ষমান।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এম. সাইদুর রহমান কাজির মোল্লার বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলা পুলিশ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সমন দিয়েছে আদালত। তাছাড়া ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদারের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা চলমান আছে।

এছাড়া ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের নামে একটি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হুমায়ুন কবিরের নামে একটি, একই ওয়ার্ডের মো. সাইদুল ইসলামের নামে ৩টি মামলা চলমান। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মো. খায়রুল মামুনের নামে একটি এবং বর্তমান কাউন্সিলর মো. আজাদ হোসেন কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে ২টি মামলা চলমান। এছাড়া ধর্ষণের অভিযোগে থাকা একটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।

যদিও বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে সেগুলো সবই বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মামলার আসামি হয়েছেন তারা।

তবে একাধিক মামলার আসামি হয়েও তাদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে। তাদের কারো মতামত অনেক মামলা উদ্দেশ্য প্রণোদীত হতে পারে। আবার কেউ বলছে, কিছু না হলে কেউ মামলার আসামি হতে পারে না। তবে তাদের উভয়ের দাবি, ত্রাণ নয়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন তারা।

উল্লেখ্য, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর ২৬ মে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।

বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবারে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৪ হাজার ১৯৫ জন নতুন ভোটারসহ মোট দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার ৭১ জন মহিলা ভোটার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //