ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে নির্বাচনী মাঠ, বাড়ছে সহিংস ঘটনা

ঘনিয়ে আসছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত ভোট গ্রহণের দিন। আর মাত্র ৮দিন পরেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। প্রতিদিনই কোন না কোন ওয়ার্ডে ঘটছে প্রার্থী এবং সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ভাঙচুর এবং সংঘর্ষসহ সহিংস ঘটনা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ভোটারদের মাঝে।

স্থানীয়রা বলছে, ওয়ার্ড পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় তাদের মধ্যেই এই সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সহিংসতা নিজেদের মধ্যে হলেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে।

আজ রবিবার (৪ জুন) নগরীর দুটি ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। যেখানে তারা সংবাদ সম্মেলন ডেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। আর সেখানেও ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে টেনে আনেন নৌকা প্রতীককে। এ নিয়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে সাধারণ মহলে ক্ষোভ বাড়ছে।

দুপুর আড়াইটায় নগরীর চান্দুর মার্কেট এলাকায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহমুদ তারিক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, রবিবার সকালে তার পাঁচজন নারী কর্মী নৌকা এবং ঘুড়ি প্রতীকের প্রচারণায় বেড় হয়। তারা ধানগবেষণা রোড এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান শরীফ ওরফে আনিস শরীফের পুরান বাড়িতে ভোট চাইতে যান। এসময় কাউন্সিলর আনিস শরীফের ভাই এবং চরমোনাই’র মুজাহিদ কমিটির সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোহন শরীফ তাদের ঘরে ডেকে নিয়ে হাতপাখা প্রতীকে ভোট চাইতে বলেন।

সাফিন মাহমুদ তারিক বলেন, দুপুরের দিকে আমি আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন পুনরায় ওই এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে আনিস শরীফের ভাই মোহন শরীফ, বজলু শরীফ, অপি শরীফ, সাইফুল শরীফ এবং শামীম হাওলাদারসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। এমনকি আনিস শরীফ নিজেও সেখানে উপস্থিত হয়ে নৌকার পোস্টার ছেঁড়ার অপবাদ দিয়ে আমার লোকেদের মারধর করেন।

এসময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছেলেসহ আমি রক্ষা পেলেও আমার কর্মী চাঁন খাঁ ও আজিম হাওলাদারকে আটকে রেখে মারধর করে একটি মোটরসাইকেল রেখে দেন। আমি পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে আহত অবস্থায় ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি অভিযোগ করেন আনিস শরীফ এবং তার লোকেরা শুরু থেকেই আমার নির্বাচন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। তারা আমার লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনায় গত ৩ জুন আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এর পরদিনই আমার এবং আমার কর্মীদের ওপর পুনরায় হামলা করেছে আনিস শরীফ।

তবে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং আসন্ন নির্বাচনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আনিসুর রহমান শরীফ।

ধানগবেষণা সড়কে নিজ বাড়িতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাফিন মাহমুদ তারিক নৌকার বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে নিজের নির্বাচনের প্রচার করছে। রবিবার দুপুরের দিকে তারিক নিজে লোকজন নিয়ে এসে নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। বিষয়টি আমার লোকেরা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে তারিক। এসময় তার লোকজনের কাছে অস্ত্র ছিল। তখন স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায় তারিক ও তার লোকেরা। তবে পালিয়ে যাবার সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলে যান তারা।

খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আসে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এছাড়া মোটরসাইকেলটিও পুলিশের জিম্মায় দিয়েছি। এই ঘটনায় মামলা করবেন বলেও জানান আনিস শরীফ।

অপরদিকে, একইদিন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে হামলার শিকার হয়েছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশ। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী বাবুনীসহ কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ পলাশের। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, পলাশের সাথে সাবেক কাউন্সিলর নাসিরের একটি মসজিদে বসে বিরোধ হয়। এসময় পলাশকে মারধর করে নাসির। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই নাসিদের ভাতিজা বাবু ও তার লোকেরা মারধর করেছে শাকিল হোসেন পলাশকে।

এর আগে শুক্রবার রাতে নগরীর বান্দরোডে পাবলিক লাইব্রেরী সংলগ্ন মাঠে ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ও এটিএম শহিদুল্লাহ কবিরের লোকেদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং চেয়ার ভাঙচুর হয়। এ নিয়ে পরদিন শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন জয়নাল আবেদীন। তাছাড়া শনিবার দুপুরে নগরীর পলাশপুর এলাকায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে অপর প্রার্থীর সমর্থককে আটক করতে গিয়ে বস্তিবাসীর রোশানলে পড়তে হয় পুলিশকে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনের প্রধান এজেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুল করীম বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিজেদের আধিপত্য দেখানোর জন্য একে অপরের সঙ্গে বিরোধে জড়াচ্ছে। এ নিয়ে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এখানে নৌকার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা এখানে আমাদের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। বিদ্রোহী থাকলে এমন ঘটনায় আমাদের দায়বদ্ধ থাকতে হতো।

অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় একটু এদিক-ওদিক হবেই। আর এটি নির্বাচনের একটি অংশ। তার পরেও নির্বাচন সহিংসতা যাতে এড়ানো যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। রবিবার ২৪ এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে যে দুটি ঘটনা ঘটেছে তা আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //