যমুনা সার কারখানায় দরপত্র আহ্বান: এলাকায় উত্তেজনা, এমডিকে শোকজ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সারকারখানায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অস্থায়ী জনবল সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ উঠেছে। আদেশ অবমাননার দায়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ছয়জনকে রবিবার (২৫ জুন) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।

এদিকে আদেশ অমান্য করে নতুন দরপত্র আহ্বান করায় উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা বিরাজ করছে এলাকায়।

যমুনা সার কারখানা সূত্র জানায়, গতবছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) যমুনা সার কারখানায় তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম-তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা অনুযায়ী ‘এ’ (বিশেষ) ক্যাটাগরিতে ৩৫ জন, ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৯৪ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১৪১ জন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৮৮ জন নবায়নকৃত ও নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে কারখানায় দৈনিক হাজিরাভিত্তিক অস্থায়ী জনবল সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগের নিয়ম। এ লক্ষ্যে গতবছরের ১৮ জুলাই কারখানা কর্তৃপক্ষ ২৯৩ জন দৈনিকভিত্তিক ক্লার্ক/ড্রাইভার/এমএলএসএস/সমমনা শ্রমিক-কর্মচারী সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এদিকে নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের’ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়।

বাধ্যতামূলক এ নিয়মটি ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত তালিকা বিজ্ঞপ্তির (বিসিআইসির পরিপত্র) পরিপন্থী হওয়ায় ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞ সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ১১ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ৯ সেপ্টেম্বর কারখানার ওই সিদ্ধান্ত এবং জনবল সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।

এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করে কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন চলতি বছরের ২৩ মে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৩৬ ক্যাটাগরির ২৩৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। পরে তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. আজমত আলী বিষয়টি আদালতে অবহিত করেন। বিজ্ঞ সরিষাবাড়ী সিনিয়র সহকারী জজ আদালত আদেশ অবমাননার দায়ে গতকাল রবিবার (২৫ জুন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহীদুল্লাহ্ খান ও ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেনসহ কারখানার ঊর্ধ্বতন ৪ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তাদের আগামী ২৪ জুলাই সশরীর কিংবা উকিলের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদান, অন্যথায় একতরফা বিচার সম্পাদন করবেন- মর্মে আদালত নোটিশে জানিয়েছেন।

মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. আজমত আলী জানান, দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’ এর লাইসেন্স বাধ্যতামূলক বিসিআইসির পরিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি বাস্তবায়ন হলে অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে।

কারখানার অসাধু কিছু কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে আইন ও আদালতের আদেশ অমান্য করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা বিরাজ করছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ্ খান ও ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //