ঈদের ছুটিতে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার

কোরবানির ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটক বরণে পুরোপুরি প্রস্তুত সৈকত নগরী কক্সবাজার। নতুন করে সাজানো হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩৮ শতাংশ কক্ষ। পর্যটক টানতে অনেক হোটেলে দেওয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। তারপরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পর্যটক।

তবে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী আগামী শুক্র ও শনিবার প্রচুর পর্যটক আসবেন কক্সবাজারে। এই দুদিনের ৭০/৭৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা রয়েছে। এ সময়ে যারা আসছেন তারা পাবেন ৫০-৬০ শতাংশ ছাড়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এখন অন্য সময়ের চাইতে পর্যটক কিছুটা কম।

আজ বৃহস্পতিবার  (২৯ জুন) ঈদের দিন কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে সৈকতে মাত্র ১৫ হাজারের মতো পর্যটক নামতে দেখা গেছে। তার মধ্যে স্থানীয় লোকজনও রয়েছেন। 

ঈদের দিন ছুটিতে রয়েছেন অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোঁরা, দোকানপাটের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সীমিত পরিসরে কিছু দোকানপাট-রেস্তোঁরা খোলা রাখা হলেও ক্রেতা নেই আগের মতো।

হোটেল-মোটেল জোনের ব্যস্ততম সৈকত সড়কটিও অনেকটা ফাঁকা, যানবাহনের দৌঁড়ঝাপও তেমন নেই। তবে এখনও সব কটি হোটেল-মোটেল মিলিয়ে ১০/১৫ হাজারের মতো পর্যটক রয়েছে। 

হোটেল রেস্তোঁরার মালিকরা জানান, আগামীকাল শুক্রবার থেকে ব্যস্ততম নগরীতে রূপ ধারণ করতে পারে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।

ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে ঢাকার পুরানা পল্টনের বাসিন্দা একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক সুমন পাল এসেছেন ঈদের দুইদিন আগে স্ব পরিবারে কক্সবাজার। থাকবেন আরো ২ দিন।

তার মতো মুসলিম নন এমন অসংখ্য পর্যটককের দেখা মিলেছে সমুদ্র সৈকতে। তাদের অভিমত যেহেতু কোরবানির ঝ্যামেলা নেই, তাই কক্সবাজারে ছুটে আসার সুযোগ হয়েছে।

তবে ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেল মালিকরা কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় ঘোষণা করছেন। যা লুফে নিতে অনেকে কক্সবাজার আসছেন বলে মনে করেন হোটেল ব্যবসায়ী নেতা আবদুর রহমান। 

ঈদের ছুটিতে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদুল আজহায় লম্বা ছুটি থাকলেও বুকিং তেমন না হওয়ার পেছনের কারণ হচ্ছে, উপযুক্ত পর্যটক মৌসুম নয়। অন্য কারণটি হচ্ছে দেশের মানুষের অতিরিক্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা। এ কারণে কোরবানি দেয়ার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শুক্রবার থেকে পর্যটক আসবেন কক্সবাজারে। 

তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের এজিএম নাবিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হোটেলে শুক্রবার থেকে টানা তিনদিন ৮০ শতাংশ রুম  বুকিং হয়ে আছে। অনলাইন-অফলাইনে বেশ সাড়া পাচ্ছি আমরা। হোটেলে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাং বুকিং হয়েছে।  

১২তলা সি-উত্তরা হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ওসমান গণী জানান, তারাও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন, কিন্তু পর্যটকের সাড়া গত বছরের মতো মিলছে না। এই হোটেলে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। অন্যান্যবার এসময়ে শতভাগ বুকিং হতো।

শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা এলাকার অন্তত শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যকে শুক্রবারের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাও সীমিত সময়ের জন্য। এমনকি কটেজগুলোতে ৪ হাজার টাকার রুম, ১ হাজার টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।  

শহরের সি গাজীপুর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল জাব্বার বলেন, আমার কটেজে ২০টি রুম আছে। সেগুলো ৪ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে থাকি। এবারে বুকিং তেমন না থাকায় ১ হাজার টাকায় রুম ভাড়া দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরের কথা মাথায় রেখে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৩টি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য প্রস্তুত লাইফগার্ড কর্মীরাও।

সি-সেইফ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন ভুট্টু বলেন, কক্সবাজার কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। পশ্চিম বঙ্গপোসাগরে সৃষ্টি হাওয়া লঘু চাপের কারণে সাগর উত্তাল। তারপরও সবকিছু মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। সমুদ্র সৈকতে যে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে সেখানে আমাদের ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হয়েছে। 

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা প্রস্তুত। কক্সবাজারে যেসব পর্যটন কেন্দ্র আছে সেখানে আমাদের টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

প্রতিটি পয়েন্ট আমাদের টুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে, পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ঈদের ছুটিতে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //