ময়মনসিংহ নগরীতে পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা। এতে পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ।

আজ সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতাসৃষ্ট ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা পরিদর্শন করে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু।

পানি নিষ্কাশনে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরীর ভাটিকাশর, বলাশপুর, মাল গুদাম, সেহরা মুন্সিবাড়ি, চামড়া গুদাম, চরপাড়া মোড়, চরপাড়া কপিক্ষেত, নয়াপাড়া, মাসকান্দা, দীঘারকান্দা, নতুন বাজার, সুইপার কলোনি এবং স্টেডিয়ামসহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন থেকে টানা বৃষ্টিতে এসব এলাকার কমপক্ষে ৩০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অনেকের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। নগরীর দীর্ঘদিনের সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দ্রুত পরিকল্পিত উপায়ে নিরসনের দাবি নাগরিক নেতা ও সাধারণ মানুষের।

নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট রোকসানা আক্তার বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে এই এলাকায় ২২ বছর হয়। তখন থেকেই দেখছি সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বছরের বেশির ভাগ সময় আমাদের পানির সঙ্গে বসবাস করতে হয়। এরমধ্যে অনেকেই কাউন্সিলর এবং মেয়র হয়েছেন, কিন্তু কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

বলাশপুর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই এলাকায় বাবা জীবনের সমস্ত আয় দিয়ে বাসা করে বড় ভুল করেছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে বাসাবাড়িতে উঠে যায়, শেষ হতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২দিন সময় লাগে। বর্ষার ছয়মাস পানি ভেঙে চলাচল করতে হয় কমপক্ষে এই ওয়ার্ডের ২০ হাজার মানুষকে। ইতোমধ্যে অনেকের পায়ে চুলকানি হয়েছে। শুধু আশ্বাস শুনি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোগান্তি কমছে না।

চরপাড়া কপিক্ষেত এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, পাঁচদিন ধরে পানিতে গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছি। তিনবেলা রান্নাও করতে পারছি না। ছেলে মেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। এভাবে কতদিন চলবে বুঝতে পারছি না। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

আউটার স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম অভিযোগ করে জানান, সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণেই প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বর্তমানে নগরীর অনেক মানুষকে পানিবন্ধী জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ড্রেনেজ কাজ সম্পন্ন না করলে এ দুর্ভোগ কোনোভাবেই শেষ হবে না। মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্ভোগ নিরসন করবে সংশ্লিষ্টরা এটাই প্রত্যাশা রাখছি।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্বাস আলি মন্ডল বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়র আন্তরিক। ড্রেনজ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও চলমান। করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না। ড্রেনেজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দুর হবে।

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি জলাবদ্ধতার সমাধানে দুপুরে ভাটিকাশর ও বলাশপুরে পরিচালিত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।

এসময় মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি বড় ড্রেন এর নির্মাণকাজ চলমান আছে। এ সংযোগগুলো সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্যও আমরা কাজ করছি। এ অঞ্চলে যেসব স্থানে পানি আটকে আছে সেসব স্থান থেকে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত অবসান ঘটবে। এছাড়াও জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়র জলাবদ্ধতা নাগরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, ড্রেনের জন্য জায়গা ছেড়ে বাড়ি করতে হবে। পানি বের হওয়ার রাস্তা তৈরি করতে না পারলে জলাবদ্ধতার অবসান হবে না। এজন্য নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও অনেকে পাইলিং এর মাটি সরাসরি ড্রেনে ফেলে ড্রেনকে অকার্যকর করে দিচ্ছেন। অনেকে আবার ময়লা আবর্জনা, বোতল, বস্তা সহ কঠিন আবর্জনা ড্রেনে ফেলছেন। এর অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে, না হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //