লাম্পি স্কিন ডিজিজ নিয়ে উদ্বেগে খামারিরা

নাটোরের ৭টি উপজেলায় গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে এই রোগে গবাদি পশুর আক্রান্ত বেশি সিংড়া ও নলডাঙ্গায় উপজেলায়। অধিকাংশ গ্রামেই গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় খামারি-গৃহস্থসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগে রয়েছেন। পানিসম্পদ অফিসের সঠিক সময়ে টিকা না দেওয়ায় ও সচেতন মূলক ক্যাম্পিং ও প্রচারের অভাবে ছড়াচ্ছে রোগ বলে জানিয়েছে খামারিরা।

জেলার ৭টি উপজেলায় গরুর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত পশু নিয়ে অনেকে ছুটছেন পল্লিচিকিৎসক ও পানিসম্পদ হাসপাতালে। সরকারি ভ্যাকসিন দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ অনেকের সিংড়া উপজেলার পানিসম্পদ অফিসের এফ. এ. আই মো. আইয়ুব আলী ও ভি.এফ.এ নাদিমের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ সঠিক সময়ে টিকা বা প্রতিষেধক পানিসম্পদ অফিস থেকে না দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা।

খামারিরা জানান, গরুর প্রথমে জ্বর হচ্ছে এবং খাওয়ার রুচি কমে যাচ্ছে। এরপর গরুর সারা শরীরে গুটি দেখা দিচ্ছে। ৩-৪ দিনের মধ্যে সেগুলো ফেটে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। আবার কিছু কিছু গরুর আক্রান্ত স্থানে পানি জমছে। পরে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মাংসে পচন ধরছে।

সিংড়া উপজেলার ভেংগী পাড়ার গ্রামের হান্নান আলী জানান, তার গ্রামে বেশিরভাগ গরুই এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার নিজের গরুও আক্রান্ত হওয়ায় পশু চিকিৎসককে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এছাড়া পশু হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এরই মধ্যে সিংড়া পানিসম্পদ অফিস থেকে ভি.এফ.এ নাদিম টিকা দিতে এসে ৫০ টাকা চাই গরু প্রতি। আমি গরু প্রতি ২০ টাকা দিতে চাইলে তিনি টিকা না দিয়ে চলে যান।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে উপজেলার পানিসম্পদ অফিসের এফ. এ. আই মো. আইয়ুব আলী ও ভি.এফ.এ নাদিমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

নলডাঙ্গা উপজেলার এলাকার খোরশেদ আলম জানান, তার একটি বাছুর লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে অনেকটা সুস্থ হয়েছে।

খাজুরা ইউনিয়ন মদনডাঙ্গা গ্রামের ছাবিনা বেগম জানান, আগে তার একটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়েছে। এবার আরেকটি গরু আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবে সঠিক সময় টিকা দেয়া হলে আমাদের গরুগুলো এই রোগে আক্রান্ত হতো না।

সিংড়া উপজেলার ভেংগী এলাকার গরুর খামারি ছালাম, মকলেস আলী ও তিরাইলের শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের খামারের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এর প্রতিষেধক টিকাও সঠিক সময় না পাওয়ায় তারাসহ তার মতো অন্য খামারিরা উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

জানা গেছে, অন্যদের না দিয়ে উপজেলা পানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কে.এম ইফতেখারুল ইসলাম বিশেষ সুবিধা নিয়ে এফ. এ. আই মো. আইয়ুব আলী ও ভি.এফ.এ নাদিম এই দুইজনকে দিয়ে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এতে সময় বেশি লাগায় এলাকায় রোগ  দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

সিংড়া উপজেলার তিরাইল গ্রামের মো. ফরহাদ হোসেন বলেছেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার গরুকে টিকা দিয়েছে। এবং একটি গরুকে সরকার টিকা দিতে এফ. এ. আই মো. আইয়ুব আলী ও ভি.এফ.এ নাদিম নিয়েছেন ৫০ টাকা করে। তিনি আরও বলেন,আমার তিন গরু জন্য ১৫০ টাকা তাদেরকে দিয়েছি।

জানা জায়, যার এক ভাইল টিকার দাম ৫০ টাকা। এক ভাইল টিকা থেকে ৮০/১০০টা গরুকে টিকা দেয়া যায়। বেশি টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় অনেক খামারির এবং গৃহস্থের গরুকে প্রতিষেধক না দেওয়ার অভিযোগ।

সিংড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কে. এম. ইফতেখারুল ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টিকা সাপ্লাই স্বল্পতা, লোকবল এর অভাব কারণে আমাদের একটু সময় লেগেছে। সরকারের টিকা দিয়ে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ নিয়ে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাণ-সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আতঙ্কিত না হয়ে গরুর চিকিৎসা নেওয়া এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে উঠবে। আমার জেলায় উঠান বৈঠক করছি ৭৬টি এটা চলমান থাকবে। অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //