টানা বর্ষণে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গত ৩৩ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটি জেলায় ১৫০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়কের ওপর মাটি ধস ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন ও সওজ জানিয়েছে, পাহাড় ও মাটি ধসের কোনো খবর পাওয়া গেলেও সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকলেও কোনো ধরণের ঘটনার ঘটেনি। সকালে আমি পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউটসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। আমরা ঝুঁকিতে থাকাদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে বিকেল ৪টার মধ্যেই চলে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার দিকে যাচ্ছেন।’ 

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমরা জেলা শহরে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসাদের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) থেকে রাঙ্গামাটি জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী সকলকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কট্রোল রুম)। কন্ট্রোল রুমের নাম্বার: ০১৮২০-৩০৮৮৬৯, ০১৮৯৪-৯৫০১০৬।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মাঝারি ও ভারী বর্ষণের ফলে রাঙ্গামাটি জেলাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কের আশপাশের পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকায় আমরা আমাদের জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রেখেছি। যাতে করে কোনো ঘটনার পরই তড়িৎভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’

এদিকে রাঙ্গামাটি আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার ক্য চিং নু মারমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। আজ সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সে বছর রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি অংশ ধসে সপ্তাহব্যাপী সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। দুই সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল। ২০১৮ সালে জেলায় নানিয়ারচরে ১২ জুন পাহাড় ধসে মারা যান আরো ১১ জন। এর পরের বছর জেলার কাপ্তাইয়ে মারা গেছেন তিনজন। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //