আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে বস্তা পাল্টে সরকারি চাল বিক্রির অভিযোগ

সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিভিন্ন চাল কৌশলে বস্তা পাল্টে গুটি স্বর্ণা নামে বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে সরকারি চাল গোডাউনে নিয়ে প্যাকেট পরিবর্তন করে মেশিনের মাধ্যমে চিকন চালে রূপ দিয়ে বাজারে সরবরাহ করে আসছেন। 

গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে হাতেনাতে ধরা পরে গোডাউন মালিক ওই আওয়ামী লীগের নেতার (মনিরুজ্জামান কাঞ্চন) চাল বলে স্বীকার করেন। তবে ওই আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান কাঞ্চন এসবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছেন।

জানা যায়, সরকার প্রতিবছর খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে থাকে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুফলভোগীদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি করে নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে। একই ভাবে ভিজিডি কার্ডধারী সুফলভোগীদের মাঝেও কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। 

তাই ওজন ঠিক রাখতে এবং এসব সুফলভোগীদের মাঝে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাল বিতরণ ও বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজি ওজনের চাল ক্রয় করেন। একই ভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য তা সরবরাহ করে থাকে।

এর বাহিরে আর কোন বস্তা ৩০ কেজি ওজনের কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহর দেয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারি সম্পদ বলে চিহ্নিত করা যায়। 

এসব চাল সুফলভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালো বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে তারা খাদ্য অধিদপ্তরের সীলমোহর যুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের সীলমোহরের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছেন। 

বেসরকারী চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল প্রতি ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তা ৫০ কেজি ওজনের। ৩০ কেজি ওজন শুধুমাত্র সরকারি চাল। এ কারণে চক্রটি সরকারি চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫ কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে দেদারছে বিক্রি করছে। 

কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে গিয়ে দেখা যায় শত শত সরকারি চালের বস্তা। তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্কা গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার সকল বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সাথে অনেকটা গোপনীয় ভাবেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ। গোপন ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারণ করা হলেও ক্যামেরা ওপেন করা যায়নি। সাংবাদিকরা চলে যাওয়া মাত্রই কৌশলে সরানো হয় সবকিছুই।

স্থানীয় একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির এসব সরকারি চাল কম দামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মূল্যে বিক্রি করছে এ চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সম্পদ তছরুপ করে জনগনের সাথে প্রতারণা করছে। উচ্চতর তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি যা সত্য সব বলেছি। কোনকিছুই লুকাই নাই। আমার গোডাউনে ৪/৫ টন মাল রয়েছে তবে এর থেকেও বড় বড় চালান যায়। আমাকে সময় দেন আমি আপনাদেরকে (সাংবাদিক) কে দেখায়ে দিবো। একবার আটকাতে পারলে খবর হয়ে যাবে।

অলিয়ার রহমান বলেন, সরকারি এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেয়া আছে এসব চাল। কিছুদিন আগেও প্রায় দুইশত মেট্রিক টন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কি ভাবে বিক্রি করেন আমি জানি না। 

অভিযোগের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  মনিরুজ্জামান কাঞ্চন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এসবের সাথে জড়িত নই। তাহলে গোডাউন মালিক আপনার নাম কেন বললো এই প্রশ্নে তিনি গোডাউন মালিককে চিনেন না বলে জানান। তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেস্টা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, আমি সকালে চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেছি। চাল চক্র নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটু পরেই আমি সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবো। আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি চাল কোন ভাবে কোন গোডাউনে থাকা কথা নয়।  কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি সরকারি চাল স্বর্ণা প্যাকেটজাত করে তাহলে অবশ্যই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //