রাঙ্গামাটিতে বৃষ্টি কমলেও ঢলে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা

বৃষ্টিপাত কমলেও উজানের ঢলের কারণে রাঙ্গামাটির প্লাবন পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হয়েছে। আজ বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমার কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কিছুটা কমে এলেও ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মঙ্গলবার জেলার ২২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলেও বুধবার সেটি দাঁড়িয়েছে ২৮টি ইউনিয়নে।

এদিকে কর্ণফুলী নদী, কাচালং নদী, রাইক্ষ্যং নদী, চেঙ্গী নদী ও শিজক নদ, সুবলং নদে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানের ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি ঘোলাটে হয়ে পড়ায় পানির ব্যবহারে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রান্তিক এলাকার মানুষ। কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও রাঙ্গামাটির দুইটি উপজেলায় বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় দশ উপজেলায় পাহাড় ধস হয়েছে ৩৫৭টি স্থানে, সবচেয়ে বেশি ধসেছে বিলাইছড়ি, সদর ও কাপ্তাই উপজেলায়। পাহাড় ও ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৯৯টি বসতঘর, এরমধ্যে আশ্রয়ণের ঘরের সংখ্যা ২৮টি। পাহাড় ধসে ১ হাজার ৩০১ পরিবারের ৬ হাজার ৪০৬জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলার বিভিন্ন সড়কের ৬৯টি স্থানে ভাঙন হয়েছে, বন্ধ রয়েছে ১২টি গ্রাম্য সড়ক। এছাড়া ৪৫টি বিদ্যুতের খুঁটি বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় ধস ও প্লাবন পরিস্থিতির কারণে ২৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ৪৩১জন আশ্রয় নিয়েছেন।


সর্বশেষ তথ্যমতে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৯৯টি গ্রামের ১০ হাজার ৬১৭টি পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ৯৬৫টি পশু আনা হলেও ১০টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। পানিতে প্লাবিত হয়ে ৩ হাজার ৩৬৮টি হেক্টর ফসলি জমি ও ১৪৯টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে রাঙ্গামাটিতে ৫৯৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে বলে বলা হয়েছে।

রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘মঙ্গলবার ২২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা পানিতে প্লাবিত হলেও ঢলের পানির কারণে বুধবার পর্যন্ত প্লাবিত একটি পৌরসভা ছাড়াও ২৮টি ইউনিয়ন। যে দুজন পানিতে নিখোঁজ হয়েছেন তাদের এখনো সন্ধান মেলেনি। আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৭০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

উজানের পানির ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পানি ঘোলাটে হয়ে পড়ায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রান্তিক গ্রামগুলোতে সাধারণ মানুষ হ্রদের ঘোলাটে পানি ব্যবহার করছেন অনেকটা বাধ্য হয়েই। তবে রাঙ্গামাটি শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাতেও পরিশোধন ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, ঢলের পানির কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি ঘোলাটে হয়েছে। আমরা পানি পরিশোধনে কেমিক্যালের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছি ব্যবহার উপযোগী পানি সরবরাহ করছি।


জুরাছড়ি-বরকলে বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত

রাঙ্গামাটি শহর অন্যান্য উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মোটামুটি চালু থাকলেও জেলার জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার পুরোদমে ভোগান্তিতে রয়েছেন। বিগত ৫ দিন ধরে রাঙ্গামাটির বিচ্ছিন্ন এই দুই উপজেলায় বিদ্যুৎসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিপিডিবি রাঙ্গামাটি বিতরণকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান জানান, মোটামুটি অন্যান্য উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা গেলেও জুরাছড়ি-বরকলে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড় ও হ্রদের ওপর দিয়ে সোর্স লাইন নেওয়ার কারণে কিছু কিছু অংশে হ্রদের পানিতেও লাইন ডুবে গেছে।

রাঙ্গামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ৮৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং সোমবার ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে আরো ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //