পাটের দাম নিয়ে হতাশায় চাষিরা

সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের জন্য বিখ্যাত নওগাঁর আত্রাই। এ জেলার মধ্যে আত্রাই উপজেলা পাট উৎপাদনে সেরা। গুনে-মানে সেরা আত্রাইয়ের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালোমন্দ নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্যের ওপর।

 জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাইয়ের বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে উৎপাদিত নতুন পাট হাটবাজারে এনে ভালো দাম না পেয়ে রীতিমতো হতাশ চাষিরা। লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও যেন উঠছে না। ফলে ফলন ভালো হলেও দাম না পেয়ে হতাশ পাট চাষিরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই, রাণীনগর, মান্দা, ধারমইহাট, মহাদেবপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিটি হাটেই নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায়, অধিকমূল্য দিয়ে ডিজেল চালিত শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। অনেকেই পানির অভাবে মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাট চাষিদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। পাটের বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ নওগাঁর আত্রাইয়ে আহসানগঞ্জহাট সপ্তাহে বৃহস্পতিবার হাট বসে এবং উপজেলার মির্জাপুর হাট সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুইদিন বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে ঐ সব বাজার গুলোতে। উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে প্রতিহাটে বিশ হাজার থেকে পঁচিশ হাজার মন পাট কেনাবেচা হয়। বর্তমানে আহসানগঞ্জ হাটে পাটের দাম রয়েছে দুই হাজার দুইশ থেকে দুই হাজার পাঁচশ টাকা। তবে এ দামে সন্তুষ্ট নন চাষিরা। 

এদিকে পাট ক্রেতাদের ভাষ্যমতে, এবার পাটের গুনগত মান সঠিক নেই। পানির সমস্যার কারণে পাটের রং এবার নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ভালো দামে পাট কিনতে পারছি না আমরা। 

আত্রাই উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামের বাবর প্রামানিক বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ দুই হাজার থেতে দুই হাজার দুইশ টাকায় বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাবে ভালো মানের পাটেও পড়েছে এর প্রভাব এবার। ভালো মানের পাট সবোচ্চ দুই হাজার ছয়শ থেকে তিন হাজারের উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্ক্ষিত খরচও উঠবে না। অনেক লোকসান গুনতে হবে।

পাট ব্যবসায়ী আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, গত বছর এক মন পাট পঁয়ত্রিশশ থেকে আটত্রিশশ টাকা পর্যন্ত পাটের দাম ছিলো । তেল ও সারের দামও কম ছিলো। এত কৃষকরা মোটামুটি ভাবে চলতে পেরেছে। তবে এবার পাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগদিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পঁচা পানিতে পাট জাগ দেয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। আবার তেল সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি। 

তিনি আরও বলেন, আহসানগঞ্জ হাটপাটের জন্য একটি বড় হাট। এখানে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল কর্তৃপক্ষের এজেন্ট রয়েছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এবারে পাটের ভালো রং না থাকায় চাষিরা ভালো দর পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেরায় এবার পাটের উৎপাদনর‌্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে একই পানিতে বারবার পাট পচানোর কারণে পাটের আঁশের গুনগত মান খারাপ হয়েছে। যে কারণে পাটের দামও কমেছে এতে কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //