কক্সবাজারের টেকনাফের গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সেখানে রাতভর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালীর পশ্চিমের গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি একনলা বড় বন্দুক, চারটি এলজি, একটি অর্ধনমিত এলজি, সাত রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, একটি ড্রিল মেশিন, একটি আগুন জ্বালানো মেশিন, দুইটি লেদ মেশিন, দুইটি বাটাল, একটি শান দেয়ার যন্ত্র, দুইটি লোহার পাইপ, দুইটি প্লাস, একটি কুপি বাতি এবং তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- টেকনাফের রঙ্গিখালী এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল উদ্দিন (৪০), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার নজির আহমদের ছেলে মো. বদি আলম (৩৫), দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে মো. কবির আহামদ (৪৩), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার বাছা মিয়ার ছেলে মো. সৈয়দ হোসেন (৩২), পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত বনি আমিনের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫), উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (২৬)।
গ্রেপ্তারকৃত ফয়সাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনটির অধিক মামলা, বদি আলমের বিরুদ্ধে ১৪টি, কবিরের বিরুদ্ধে দুইটি, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি এবং মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে কক্সবাজারস্থ র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, র্যাবের একটি দল ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে পাহাড়ে একটি ডাকাত দলের আস্তানা এবং অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায়। অভিযানে ডাকাত দলের সদস্যরা র্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে এবং এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফয়সালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্র, সরঞ্জাম উদ্ধার করে অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের বার্তায় জানানো হয়েছে, ফয়সালের নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যাসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার সুবাদে সেখানে গড়ে তোলে অস্ত্র তৈরির কারখানা। ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্য সহযোগীদের মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহসহ নিজেদের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেতেন।
এছাড়া ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান থেকে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্দি করে রাখতো। এবং ভিকটিমের পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের ওপর চালানো হতো পৈশাচিক নির্যাতন। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছেন বলে গ্রেপ্তারকৃত অপরাধীরা জানান।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে গ্রেপ্তারদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে বার্তায় জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : কক্সবাজার অস্ত্র অস্ত্র তৈরির কারখানা
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh