বরিশালে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে নাকাল নগরবাসী

একদিকে প্রচণ্ড গরম। তার মধ্যেই চলছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। প্রতিদিন সকাল-বিকেল-রাত সমান তালে লোডশেডিং হচ্ছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারেই পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের।

যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, সম্প্রতি সময়ে লোডশেডিং অনেকাংশে কমেছে। কয়েকদিন আগেও যেভাবে লোডশেডিং হতো এখন আর তেমন হচ্ছে না।

নগরীর বান্দ রোড এলাকায় মেডিকেল ফিডারের বাসিন্দা আলতাফ সিকদার বলেন, সম্প্রতি সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে। শনিবার রাত ১টার পরে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। আধাঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এসেই আবার চলে গিয়ে থাকলো আরও অন্তত ১৫ মিনিট। এরপর আবার সকাল না হতেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। যা স্থায়ী হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা।

অপরদিকে, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী রুকাইয়া বিনতে জান্নাত বলেন, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা না যেতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে বিদ্যুৎ আসে। ততক্ষণে গরমে ঘেমে একাকার। কেন্দ্রের মধ্যে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা অন্ধকারেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। পরে আলো পেতে পরীক্ষার হলের জানালাগুলো খুলে দেয়া হয়।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, ছেলেমেয়েদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখন সকালে-রাতে ওদের পড়াশুনা করতে হচ্ছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারছে না তারা। আর কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষা চলাকালেও যদি বিদ্যুৎ যায় তাহলে কি করার থাকে। অন্তত পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার দাবি তোলেন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমান সময়ে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন তারা। এর ফলে লোডশেড দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বরিশাল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, রবিবার অফ পিকে আমাদের দুই ডিভিশনসহ ঝালকাঠি এবং নলছিটিতে ডিভিশনে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো। এর মধ্যে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর চাহিদা ১৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রবিবার সকালে বরিশাল ডিভিশন-১ এ ৩০ মেগাওয়াট এবং বিভাগ-২ এ ১১ মেগাওয়াট লোডশেড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৮০ মেগাওয়াট। সেখানে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাই ৫০-৫৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি পূরণ করতে বাধ্য হয়ে লোডশেড দিতে হচ্ছে। তবে গত কয়েকদিন আগে এখনকার থেকে বেশি লোডশেড হতো। তা এখন কমে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র সামিট বরিশাল পাওয়ার লিমিটেডে প্রতিদিন ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা বরিশাল থেকে সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর বাইরে ভোলা এবং পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

বরিশালের সচেতন নাগরিকরা বলেন, বিদ্যুতের বিপণন ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বরিশাল বিভাগে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে এই অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে বাকিটা জাতীয় গ্রিডে গেলে এই অঞ্চলে লোডশেডিং যেমন থাকবে না, তেমনি বাণিজ্যিক খাতও আরও সম্প্রসারিত হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //