অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা ‘আরসা’ সন্ত্রাসী আটক

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুসকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১৫)। বাহিনীটি বলছে, মাদ্রাসার শিক্ষকতা ছেড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেয় ইউনুস। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরসার অস্ত্র মজুদ, অস্ত্র কেনাবেচা ও অর্থ লেনদেনের তথ্য দিয়েছে।

র‍্যাবের দাবি, প্রতি মাসে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মিয়ানমার থেকে আরসার জন্য টাকা আসে। সেই টাকা থেকে অস্ত্র কেনা ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।

আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরীর পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।

র‍্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমার খোলা এলাকা থেকে ইউনুসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, ছয় রাউন্ড তাজা কার্তুজ এবং একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ইউনুস উখিয়ার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি/১৩ ব্লকের মৃত হাবিবুল্লাহর ছেলে। মামলা দিয়ে তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাহিনীটি জানায়, ইউনুছের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ৫ টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা হলো গতবছরের ১৫ অক্টোবর হেডমাঝি আনোয়ারকে কুপিয়ে হত্যা, চলতি বছরের ৩ মার্চ রোহিঙ্গা মোহাম্মদ রফিককে গুলি করে হত্যা, এই ঘটনার ১০ দিন পর ১৩ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগনোর নির্দেশ, ১১ এপ্রিল এবং ৯ জুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অভিযানে তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা। এছাডাও ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর আরসার সস্ত্রাসীরা ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবাসিক মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৬ জনকে হত্যা, চলতি বছরের ৩ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা রফিক এবং ১৮ মার্চ ইসলামী মাহাযের নেতা হাফেজ মাহবুবকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা ইউনুস স্বীকার করেছে বলে র‍্যাবের দাবি।

র‍্যাব কর্মকর্তা আবু সালাম চৌধুরী জানান, মোহাম্মদ ইউনুস মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় মংডু শহরের মেরুল্লা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। শিক্ষকতার আড়ালে আরসার হয়ে কাজ করত। আরসার আরেক সদস্য মৌলভী আরিফুল্লাহর মাধ্যমে ২০১৬ সালে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটিতে যোগ দেয় ইউনুস। সে আরসার আমির আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, ওস্তাদ খালেদ, সমউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলেম-ওলামা, হেডমাঝি, সাবমাঝি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করে আরসায় যোগদানের জন্য উৎসাহ দিত। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আরসার অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

আরসার অর্থের উৎস সম্পর্কে ইউনুসের দেওয়া তথ্যের বরাতে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, তার কাছে সৌদি আরব থেকে আবুল বশর ১ লাখ, মৌলভী ইসমাইল ১ লাখ, পারভেজ ১৫ হাজার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জহুর আলম ১ লাখ, মালয়েশিয়া থেকে হারুন ১ লাখ, থাইল্যান্ড থেকে হারুন ৬৫ হাজার এবং সৌদি আরব থেকে মো: ইসলাম ১ লাখ টাকাসহ মোট ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া থেকে অজ্ঞাত রোহিঙ্গা টাকা পাঠিয়েছেন। প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকা আরসার ক্যাম্প জিম্মাদারদের কাছে আসে। সেই টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনা ও দলের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা/বেতন দেওয়া হয়। বর্তমানে ইউনুসের কাছে তার বিকাশ একাউন্টে আনুমানিক ৩৩ থেকে ৩৭ হাজার টাকা রয়েছে। ইউনুস আরসার সংগঠনের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৫ টাকা সংগ্রহ করেন।

ইউনুসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব দাবি করে, আরসার ২০০-২৫০ জন সদস্য রয়েছে। তারা ২০১৬ সালে মিয়ানমারে তারাশুখ থানায় আক্রমন করে ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে এবং এটি তাদের অস্ত্র সরবরাহের মূল উৎস বলে জানা যায়। আরসার অন্য সদস্য সমিউদ্দিন (ক্যাম্প-৬) এবং হোসেন (ক্যাম্প-১৭) অস্ত্র ও অ্যানিমেশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানে। ছোট ছোট অস্ত্র ও অ্যানিমেশন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহ করে থাকে। আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর সমিউদ্দিন ও ইউনুসের কাছে জমা থাকে। পরে তাদের অধীনস্থ সদস্যদের কাছে অস্ত্র বন্টন করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //