মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিকশা চালিয়ে ২০০১ সালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার টান হাসাদিয়া গ্রামে জয়নাল আবেদীন প্রতিষ্ঠা করেন মমতাজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অসহায় মানুষের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে হাসপাতালটি।
২০২২ সালে সাদা মনের মানুষ খ্যাত রিকশাচালক জয়নাল আবেদীন মারা গেলে টানাপড়েনে পড়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম। বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ সেবা চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে অন্যান্য সেবা।
গ্রামের অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে জয়নাল আবেদীন রিকশা চালিয়ে ২৪ শতাংশ জায়গা কিনে মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন আধপাকা মমতাজ হাসপাতাল। এমন মানবিক কার্যক্রমে সারাদেশে প্রশংসায় ভাসেন জয়নাল আবেদীন। হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সরকারের মন্ত্রীরাও বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি জয়নাল আবেদীন মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে সরকারি বেসরকারি সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম।
মমতাজ হাসপাতালের পরিচালক আলপনা জেরিন বলেন, আমার দাদাশ্বশুর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এরপর আমার শ্বশুর জয়নাল আবেদীন গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে তার বড় মেয়ে মমতাজ বেগমের নামে প্রতিষ্ঠা করেন মমতাজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিত্তবানদের সহযোগিতায় হাসপাতালটি সুন্দরভাবে চলছিল। গ্রামের মানুষকে ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর প্যাসিফিক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড হাসপাতালে তাদের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। অন্যান্য সহযোগিতাও বন্ধ রয়েছে। যার কারণে চিকিৎসা সেবায় প্রভাব পড়েছে। এখন সপ্তাহে তিন দিন (শনি, সোম এবং বুধবার) বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ সেবা চালু থাকে। ১০ টাকা টিকিটে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়। এর ব্যয় পুরোটাই আমার স্বামী জাহিদ হাসান বহন করছেন। সরকার ও বিত্তবানদের একটু সহযোগিতা পেলে হাসপাতালটির কার্যক্রম আবারও পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হতো।
মমতাজ হাসপাতালের চিকিৎসক আলী হোসেন বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমি নিয়মিত এখানে রোগী দেখছি। সাদা মনের মানুষ খ্যাত জয়নাল আবেদীনের জীবদ্দশায় হাসপাতালটির কার্যক্রম খুব সুন্দরভাবে চলছিল। এখানে রোগীদের ভর্তিসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হতো।
এখন কোনো সহযোগিতা না থাকায় সপ্তাহে তিন দিন ১০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে রোগী দেখে তাদের ১৭ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয়। পাঁচ থেকে ছয় গ্রামের মানুষের ভরসাস্থল এই হাসপাতালটি নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। একটু সহযোগিতায় প্রান্তিক মানুষের সেবায় আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
মমতাজ বেগম বলেন, বাবার রিকশা চালানোর টাকায় আমার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয় আধপাকা মমতাজ হাসপাতাল। রিকশা চালিয়ে এমন কার্যক্রমের কারণে ২০০৮ সালে ‘এসো বাংলাদেশ গড়ি’ শীর্ষক রোড-শোতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাবাকে ‘সাদা মনের মানুষ’ হিসেবে সনদ ও পদক দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ময়মনসিংহ টান হাসাদিয়া গ্রাম হাসপাতাল
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh