দৃষ্টি নেই, কণ্ঠের সুরেই চলে সংসার

চায়ের দোকানের ভেতরে ছোট্ট জটলা। ভেসে আসছে ঢোল ও হারমোনিয়ামের শব্দ। কাছে যেতেই ভেসে এলো গান, ‘কত পাপী-তাপি পার হইয়া যায়, তোমার নাম লইয়া, ও নবী...’

কাছে গিয়ে দেখা গেল, গান গাইছেন দুই অন্ধ ব্যক্তি। তাদের ঘিরে আছে ২০ থেকে ২৫ জন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।

তালিম না নিলেও গলা ছেড়ে গান আর দুই হাতের আঙুলের সাহায্যে সুর তোলা বাবু সরকার ও আবুল হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ধামরাইয়ের পৌরসভার ধামরাই বাজার এলাকায় তাদের দেখা গেল। মধ্য দুপুরে ব্যস্ত সময়েও সেখানে বসে মন ভরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। 

গান শেষে কথা হয় তাদের সঙ্গে। বাবু সরকারের বাড়ি ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের লাড়ুয়াকুন্ডু গ্রামে। আর আবুল হোসেনের বাড়ি একই ইউনিয়নের সুতিপাড়া ইউনিয়নের বেলিশ্বর গ্রামে।

দুইজন মিলে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আর গান গেয়ে যা পান, তাই দিয়ে চলে সংসার। প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন পথে, চায়ের দোকানে, হাটবাজারে বা কোনো গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে তাড়া পথচারীদের গান শোনান। দর্শকদের খুশি করে যে অর্থ পান, তা-ই দিয়ে সংসার চলে।

বাবু সরকার জানান, জন্ম থেকেই অন্ধ তিনি। তার চোখ পৃথিবীর আলো দেখেনি। জন্মেছেন দরিদ্র পরিবারে। তবে ভিক্ষার রাস্তায় যাননি। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক ছিলো তার। শুনে শুনে শিখেছেন গান। তারপর বিভিন্ন হাটে হাটে গান গেয়ে উপার্জন করেছেন টাকা। সেই টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি হারমোনিয়াম। হারমোনিয়াম বাজানোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তার।

পথে পথে গান গাইতে গাইতেই তার পরিচয় হয় আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবুল হোসেনের সঙ্গে। মিলে গেলে দুইজনে জুটি বেধেই গান গাওয়া শুরু করেন।

দুইজনে জানান, মানুষ তাদের গান শুনে খুশি হয়ে টাকা দেন। আর তাতেই চলে তাদের সংসার।

বাবু সরকারের পরিবারে মা, বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছয় জনের সংসার।

অপরদিকে এক চোখ পুরোপুরি অন্ধ ও আরেক চোখে অল্প দেখতে পান আবুল হোসেন। তিনি ঢোল বাজান আর গান করেন। আবুল হোসেনের সাত সদস্যের পরিবার। খুব কষ্ট করেই চালান সংসার, কষ্ট হলেও কারোও কাছে হাত পাততে রাজি নন তিনি।

এই গায়ক বলেন, গান শোনাই মানুষরে। মানুষ খুশি হয়ে যা দেয়, তাই নেই আমরা কারো ওপর জোর করি না।

দুইজনে মিলে একসময় ফেরিতে গান গাইতেন। ধামরাই ছাড়াও গান গাইতে গাইতে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল রাজশাহী পর্যন্তও গেছেন তারা। বিত্তবানদের সহায়তা পেলে সংসারের হালটা আরও শক্তিশালীভাবে ধরতে পারতেন বলেও জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //