পুঠিয়া-দূর্গাপুর আসনে বিভক্ত আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে রাজশাহী- ৫ পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মূলত সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবং বর্তমান এমপি ডাক্তার মনসুর রহমানের অনুসারী হিসাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। রয়েছে পৃথক দলীয় কার্যালয়। দলীয় কর্মসূচিও পালন করা হয় আলাদাভাবে।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ডাক্তার মনসুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এরপর থেকে দলীয় কর্মসূচির সভা-সমাবেশ পালিত হয় আলাদাভাবে। 

দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, দলে এখন আর কেও আওয়ামী লীগ নেই! দুই এমপি লীগ ও আমি লীগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বিভক্তির কারণে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। আরেকজন বর্তমান সংসদ সদস্য ডাক্তার মনসুর রহমান। দলের তৃণমূলের কোনো সমস্যা জটিলতা উপজেলা বা জেলার নেতারা তা সমাধান করবেন। কিন্তু যারা দলের মূল দায়িত্বে থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন তাদের বিষয়টি কে নিরসন করবেন?

তিনি বলেন, দলের মধ্যে এই অবস্থা ও বিভক্তির বিষয়গুলো নিয়ে অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করবেন।

দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা বিষয় হচ্ছে কে সাবেক এমপি ও বর্তমান এমপির সমর্থক! আর দলের বিভিন্ন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও আলাদাভাবে অংশ গ্রহণ করছেন। গত ১৫ আগস্ট উপজেলা সদরে দুই গ্রুপের আলাদা দলীয় কার্যালয়ে পৃথক সভা হয়েছে।২১ আগস্ট মনসুর রহমান সমর্থকরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে সভা করলেও দারা পন্থিরা করেছেন আমগাছি ইউনিয়ন এলাকায়।

অপরদিকে সাবেক পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জামাল হোসেন বলেন, ১৫ আগস্ট দারা পন্থিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বানেশ্বর শোক সভা করেছেন। ওইদিন ডাক্তার মনসুর পক্ষের কেও অংশ গ্রহণ করেননি। আর ১৮ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের শোকসভায় দারা সমর্থকরা কেও আসেননি। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ সভাও হয় আলাদাভাবে। বিভেদের কারণে দলীয় সভা সমাবেশে এক পক্ষের নেতাকর্মীরা আরেক পক্ষে অংশ গ্রহণ করেন না।

পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিএম হিরা বাচ্চু বলেন, বৃহৎ দলে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই। তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নয়।

তিনি বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। উপজেলা আওয়ামী লীগ ওইদিন দলীয় কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। এর দুইদিন পর গত ১৮ আগস্ট পুঠিয়া হাই স্কুল মাঠে শোকসভা করেছেন। তিনি বলেন দলীয় কর্মসূচিতে এটা কেনো হবে?

তবে পুঠিয়া-দুর্গাপুর এমপি ডাক্তার মনসুর রহমান বলেন, দলের মধ্যে বিভক্তি কে সৃষ্টি করেছেন সেটা সাবেক এমপিকে জিজ্ঞাসা করুন। দলীয় যত অনুষ্ঠান সভা-সমাবেশ করা হয় সেখানে সাবেক এমপিকে আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু তিনি ও তার সমর্থকরা এই অনুষ্ঠানগুলোতে আসেন না। আর তার নেতৃত্বে দলীয় যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেখানে আমাদের আমন্ত্রণ করা হয় না।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পুঠিয়া-দুর্গাপুর সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য দলীয় যে অনুষ্ঠানগুলো পালন করেন সেখানে আমাকে দাওয়াত দেন না। আর দলের কর্মসূচি নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে করতেই পারেন। 

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দুই এমপিতে দলের বিভক্তি কেনো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলে কোনো বিভক্তি নেই। তবে কেও নিজেকে আলাদা ভাবলে সেটা দলের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //