উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অসদাচরণের অভিযোগ

ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হয়রানি, অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও অভিযোগ ওঠা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসব মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এমন একটি অভিযোগের কপি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডাকযোগে পাঠানো হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর আবেদনটিতে উপজেলার সিএইচসিপি, স্বাস্থ্য সহকারী ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) নাজমুন নাহার।

আবেদনটির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ধামরাই ঢাকাতে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছি। ধামরাই উপজেলাটির আয়তন প্রায় ৩০৭ বর্গ কিলোমিটার এবং ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ছয় লাখ জনসংখ্যার বসবাস। উপজেলায় ৪৮ জন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ থাকলেও সিংহভাগ পদ শূন্য রয়েছে। উক্ত পদে জনবল রয়েছে মাত্র ২০ জন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১৬ জনের পদ থাকলেও রয়েছে মাত্র ৮ জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ৪ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে পদসমূহ শূন্য রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিংহভাগ পদ শূন্য থাকলেও বহু প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা স্বল্প সংখ্যক কর্মী সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন দীর্ঘদিন যাবত স্বাস্থ্য সহকারীগণ নিজ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অপর আরেকটি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছি।

এ অবস্থায় ডা. নুর রিফাত আরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি কর্মচারীদের সাথে অসন্তোষজনক আচরণ করে আসছেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পরও তার আচরণগত পরিবর্তন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তার দুর্নীতি ও অসদাচরণের কিছু তথ্য উল্লেখ্য করলাম।

সেগুলো হলো- বিভিন্ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ, মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের সাথে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বাক্য ব্যবহারে অপমানিত করা, প্রাপ্য অর্থ দাবী করলে চাকুরী হারানোর ভয় দেখানো, তুচ্ছ কারণে অযাচিতভাবে কৈফিয়ত তলব করে হয়রানি করা ও মহিলা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের সাথে অনৈতিক আচরণের মাধ্যমে চরিত্রহনন করার চেষ্টা করে মানসিক নির্যাতন।

অভিযোগকারী সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমুন নাহার জানান, আমাদের আচার-আচরণ ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে ফিল্ডে গেলেই স্থানীয়দের কাছে জানতে পারবেন। আর আমরা ফিল্ডে যাই কি না সেটা উনি জানবেন কিভাবে? উনি নিজেইতো ফিল্ডে যান না কখনও। এখানে আমরা ৭২ জন স্বাক্ষর করেছি। নাম, পদবী ও মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রত্যেকটি লোক জেনে-বুঝে দেখে স্বাক্ষর করেছি। উনি (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) বাঁচার জন্য এখন এসব বানাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময় উনি অশালীন ভাষা ব্যবহার করে আমাদের হেয় করেছেন। অনেক সময় মিটিংয়ে আমাদের গরু-ছাগল বলে সম্বোধন করতেন। একবার এমপি সাহেবের কর্মসূচিতে আমরা বেলুন ফোলাইনি দেখে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন। এমপি সাহেবকে জড়িয়ে আমাদের চরিত্রহনন করেছেন। এমনকি আমাদের স্বামীদের ডিভোর্স দেয়ার মতো অশালীন মন্তব্য শুনতে হয় আমাদের। এরপর গত ১২ জুলাই সচিব মহোদয় পরিদর্শনে আসলে সেখানেও তাকে জড়িয়ে আমাদের রাত কাটানোর মতো নোংরা মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময় আমাদের চাকরীচ্যুত করারও হুমকি দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আমরাও মানুষ। আমরা ছোট চাকরি করি দেখে কি কোনো মানসম্মান নেই আমাদের? একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এভাবে কথা বলতে পারেন না। উনি আমাদের অভিভাবক। ওনার কাছ থেকেই আমরা শিখব।

নাজমুন নাহার আরও অভিযোগ করে বলেন, গতকাল উনি আমাদের ৪৮ জন সিএইচসিপিকে ফিল্ডের কাজ রেখে তার পার্সোনাল কাজের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেকে আনেন। এতে করে ফিল্ড পর্যায়ে সেবা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়েছে। সবকিছু মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে উনার পক্ষে কাগজে স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেন। এসময় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও ভীতি প্রদর্শন করেন। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর রিফাত আরা বলেন, এগুলোতো মিথ্যা কথা। ওইখানে কিছু গ্রুপ আছে যারা হচ্ছে বিভিন্ন স্টাফদের কাছে মিথ্যা স্বাক্ষর নিয়ে একটা ভুয়া অভিযোগ করেছে। এটা নিয়ে ওদের স্টাফদের মধ্যেই গণ্ডগোল চলতেছে যে আপনারা কেনো স্যারকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। আপনাদের উদ্দেশ্যে কি? মূলত ফিল্ডে যারা কাজ করে টিকার বাকী সময় গুলোতে ওদের কর্ম এরিয়াতে থাকতে হয়। কিন্তু ওরা ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া করে। এটার কারণে ভিজিটে গিয়ে ওদের পাওয়া যায় না। ফোন করেও পাওয়া যায় না। এগুলা নিয়ে বারবার ওদেরকে মৌখিক ভাবে বলেছি, তারপর রাগ করেছি। তারপরে শোকজও করেছি। এএইচআররা মূলত ফিল্ডেই কাজ করবে। এতদিন ধরে এগুলাই বলে আসতেছি। এখন যখন শোকজ করা শুরু করছি তখন আমার বিরুদ্ধে ওরা অভিযোগ করেছে। যে স্বাস্থ্য সহকারী অভিযোগ করেছে সম্প্রতি তাকে ফিল্ডে গিয়ে না পাওয়ায় তাকে শোকজ করেছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা জানান, অভিযোগটাতো আমার কাছে আসেনি। ওটা ডিজি মহোদয়ের কাছে গেছে জানছি। তবে আমার কাছে একটা কপি এসেছে। আর তদন্তের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেটা করে।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, গত সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ হয়েছে বলে জেনেছি। যেহেতু অভিযোগটি মহাপরিচালক বরাবর করা হয়েছে এটার এখতিয়ার তার, আমার না। সিদ্ধান্তের বিষয়টাও মহাপরিচালকের ব্যাপার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //