ঋণ শোধ করতে বিক্রি হলো আলোচিত কুমির খামার

ঋণ শোধ করতে ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হলো ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রতিষ্ঠিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের সেই আলোচিত কুমির খামারটি।

সম্প্রতি দুই দফা নিলামে সবোর্চ্চ দরদাতা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উদ্দীপন’ খামারটি কিনতে সক্ষম হন। ঋণ পরিশোধ না করায় খামারটি বিক্রি করেছেন নন—ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।

২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে ১৫ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বাণিজ্যিক কুমিরের খামার রেপটাইলস ফার্ম। ১৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে খামারের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন মুশতাক আহমেদ। আর ৩৬ শতাংশ মালিকানা নিয়ে সাথে ছিলেন মেজবাহুল হক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ প্রকল্পের ঋণ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তখন শেয়ার ছিল ৪৯ শতাংশ।


২০১২ সালে খামারের সব শেয়ার কিনে মালিকানায় চলে আসেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। ২০১৩ সালে খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৪ কোটি ২৮ লাখ মূল্যের ১৩ দশমিক ৪ শূন্য একর জমি বন্ধকের বিপরীতে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১১০ কোটি টাকা।

২০১৯ সাল থেকে ফার্মের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিল না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এছাড়া অব্যবস্থাপনা, খাদ্য ঘাটতি এবং ফার্মের আর্থিক সংকটের কারণে খামারে কমতে থাকে কুমিরের সংখ্যা। পরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বছরের মার্চে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে।


খামার পরিচালনায় পরিচালকের দায়িত্বপান ড. নাঈম আহম্মেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বপান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক। এছাড়া পরিচালক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়, রেজাউল সিকদার, ড. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং শেখ মো.আব্দুর রশিদকে।

ভালুকা রেপটাইল ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক বলেন, আমি নিজে একজন কুমির বিশেষজ্ঞ। দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক কুমির নানা রোগ—বালাইয়ে আক্রান্ত ছিল। তা সারিয়ে তুলতে সক্ষম হই। সংকট কাটাতে চলতি বছরের শুরুতে চালু করি ট্যুরিজম। ১ হাজার ৭০০ কুমির থেকে এখন কুমিরের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। রপ্তানি যোগ্য কুমিরের সংখ্যা রয়েছে ৪৫০টির মতো। খামারটি নিলামে বিক্রি হয়েছে। তবে আমরা এখনো কোন চিঠি পায়নি। নতুন যারা দায়িত্বে আসবে তারা যদি মনে করে আমার সহযোগিতা দরকার তা আমি সর্বদায় প্রস্তুত আছি। আমি চাই খামারটি টিকে থাকুক।

রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে ১৫টি পুরুষ কুমিরসহ ৭৫টি কুমির আনা হয়। যার জন্য তাদের ব্যয় হয় প্রায় সোয়া কোটি টাকা। খামারে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার কুমির রয়েছে।

বিশ্ব বাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এই কুমির খামার থেকে ৪০০ চামড়া রপ্তানি হয় জাপানে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ২৫১টি চামড়া রপ্তানি করা হয়।


তিনি আরো বলেন, মাঝখানে খামারটি নানা সংকটে ছিল। নতুন পরিচালনা পর্ষদ আসার পর ২৮ জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর সংকট কেটেছে। খামারটিতে শুরু থেকে রয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি। খামারটি সুন্দরভাবে চলুক এটাই আমার চাওয়া।

এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, রেপটাইল ফার্মের মূল্য ছিল ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আমরা ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মনে করি আশানুরুপ দাম পেয়েছি। এরমধ্যে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ১০ শতাংশ টাকা উদ্দীপন দিয়েছে। বাকি টাকা তারা তিনমাসের মধ্যে পরিশোধ করবে। ইতোমধ্যে টাকা দেওয়া শুরু করেছে। টাকা দেওয়া সম্পন্ন হলে আইন অনুসারে খামারটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //