সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধার ঘরে তালা

তাঁত ব্যবসায় সুদের কারবারিদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা ঋণ নেন ইদ্রিস মল্লিক (৫৫)। সুদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর সেই টাকা আদায়ে ইদ্রিসের ঘরে থাকা তার বৃদ্ধা মা রমেছা বেগমকে (৯০) জোরপূর্বক বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয় সুদের কারবারিরা।

এমনই এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া কারিগরপাড়া গ্রামে। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে তার ঘরে তুলে দেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাসিন্দা মৃত রায়হান মল্লিকের স্ত্রী বৃদ্ধা রমেছা বেগম তার ছেলে ইদ্রিসের ঘরের দরজার সামনে বসে আছেন। টিনের ঘরটিতে তিনটি কক্ষ। দুটি কক্ষ তার ছেলের। আর একটি কক্ষে থাকেন বৃদ্ধা রমেছা। তিনটি কক্ষে তালা ঝুলানো। ছেলে ইদ্রিস বা তার স্ত্রী-সন্তান কেউ বাড়িতে নেই।

জানতে চাইলে বৃদ্ধা রমেছা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে ইদ্রিস তিনজনের কাছ থেকে সুদে টেকা নিয়েছিল। সেই টাকা দেয়নি। তাই ছেলে পালিয়ে গেছেন।

পরে বিকেল চারটার দিকে চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খান তার পরিষদের অন্য দুই ইউপি সদস্যসহ বৃদ্ধার বাড়িতে যান। এসময় স্বজন প্রতিবেশীসহ অন্যান্য মানুষের উপস্থিতিতে তালা ভেঙে বৃদ্ধা রমেছা বেগমকে ঘরে তুলে দেন। তাকে বাড়িতে বসবাসে আশ্বস্ত করেন। এসময় বৃদ্ধাকে কিছু নগদ আর্থিক সহায়তাও দেন চেয়ারম্যান।


সেখানে উপস্থিত রমেছা খাতুনের ছোট ছেলে গোলাম মোস্তফা জানান, তারা চার ভাই, দুই বোন। ইদ্রিস আলী মেঝো ভাই। তাঁত ব্যবসার করেন। চারটি তাঁতের কারখানা আছে তার। বছর খানেক আগে ব্যবসার কারণে একই গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের কাছ থেকে অনেক টাকা সুদে নেন। সুদের টাকা দিতে পারেনি। সুদের কারবারিরা তাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। সেই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথায় গেছে জানি না।

স্থানীয় দুই নাম্বার ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, সুদের টাকার জন্য ছেলেকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তালা দেওয়ার ঘটনাটি একটি জঘন্যতম অমানবিক ঘটনা। সুদের কারবারিদের কারণে অনেক সংসারে অশান্তি বিরাজ করছে। তাদের আমরা বিভিন্ন সময়ে সুদের ব্যবসা করতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা গোপনে এ কাজগুলো করেন। যারা সুদে টাকা নেয় তাদের সচেতন হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আজ বিকেলে পরিষদ থেকে বাড়ি যাবার সময় ওই বৃদ্ধা আমাকে ঘটনাটি জানায়। তখনই আমি ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাই। সুদের টাকার জন্য এমন কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ঘরে তুলে দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেছি। সুদের ব্যবসা গ্রামগঞ্জে এমনভাবে ঢুকেছে তাদের প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সহযোগিতা চাই, যাতে সুদের ব্যবসা বন্ধ করতে পারি।

এ বিষয়ে কথা হয় সুদের কারবারী তিনজন তারাবাড়িয়া মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের সাথে। তারা সুদে টাকা ধার দেবার কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের তিনজনের কাছ থেকে জমি বন্ধক রাখা বাবদ মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন ইদ্রিস মল্লিক। তিনি টাকাও ফেরত দেন না, জমিও দেন না। এখন আমাদের তো টাকা লাগবে। তাই বাধ্য হয়ে ইদ্রিসের বাড়িতে গিয়ে তার ঘরে তালা দিয়েছি।

তাই বলে বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তার কক্ষে তালা দেওয়া কি ঠিক কাজ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কাজটা ঠিক হয়নি। আমরা জানি ঘরটা ইদ্রিসের। যাহোক চেয়ারম্যান তালা ভেঙে দিছেন, ভালো করেছেন।

এ বিষয়ে তাঁত ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পলাতক থাকায় ও তার মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //