সাতক্ষীরায় প্রস্তুত ৬০৬ পূজামণ্ডপ, মেট্রোরেলের আদলে মন্দির

শারদীয় দূর্গোৎসবে দেবী আসবে বলে ঘোটকে (ঘোড়া) প্রস্তুত। অনুরক্ত ভক্তকুল অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত। নিয়মের রথ তার আগমনী গান গাইছে। উপকূল জেলা সাতক্ষীরার সর্বত্র আজ শারদীয় দূর্গোৎসবের সাজ সাজ রব। নরম কাদা-মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে গড়ে তোলা দশভুজা দেবী দূর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে সাতক্ষীরার প্রতিটি পূজামণ্ডপ।

নানান রঙ আর তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি শেষ মুহূর্তে রঙের আঁচড় আর সাজসজ্জায় দূর্গাদেবীকে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার প্রতিমা শিল্পীরা। শুধু তাই নয় সরকারের উন্নয়নকে তুলে ধরতে ও ভক্তদের মন আকৃষ্ট করতে সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে মন্দিরের সামনে খালে তৈরি করা হয়ে মেট্রোরেলের আদলে মন্দিরে প্রবেশ পথ। যা ভক্তদের মন কেড়েছে। আজ শুক্রবার (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে চলবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত।

সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলায় ৬০৬টি পূজামণ্ডপে এবছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে কলারোয়া উপজেলার ৪৮টি, তালা ১৯৬টি, সাতক্ষীরা সদর ১১২টি, আশাশুনি ১০৮টি, দেবহাটা ২১টি, কালিগঞ্জ ৫১টি ও শ্যামনগরের ৭০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৫৯৯টি ও চলতি বছর ৬০৬টি। গত বছরের তুলনায় এবছর ৭টি পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।


জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, কেউ মাটির কাজ শেষ করে দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড় আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে। তাদের যেনো দম ফেলার সময় নেই। রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

প্রতিমা শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী  জানান, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন।  

বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি করুণা কান্ত ব্যানার্জী জানান, এবছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শারদীয় দূর্গোৎসব শুরু হচ্ছে । ফলে কিছু উগ্র মৌলবাদীরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে কিছুটা আতংক কাজ করছে।


সাতক্ষীরা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ৬০৬টি মণ্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। আশাশুনি উপজেলার মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে মন্দিরের সামনে খালে তৈরি করা হয়ে মেট্রোরেলের আদলে মন্দিরে প্রবেশ পথ। যা ভক্তদের মন কেড়েছে।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার অধিকারী বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ  থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে থাকবে পুলিশ। পুলিশের টিম পূজা মণ্ডপগুলো পরিদর্শন করবে। পাশাপাশি যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আছে তাদের ডিউটিগুলো সবসময় পর্যবেক্ষণ করবে। ভক্তদের মহেশ্বরকাটি সার্বজনীন পূজা দেখতে আশার আহবান জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //