বরিশালে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ১২ সদস্যের

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলনের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন পরিষদের ১২ জন সদস্য। তারা মিলনের বিচার দাবি করে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে রহমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন সদস্যের সিল এবং সাক্ষরিত একপাতার অভিযোগ তিনটি দপ্তর প্রধান বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্র উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউপি সচিবের সহযোগিতায় সরকারি বরাদ্দের সুসম বণ্টন না করা, মাসিক সভা না করা এবং ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ ৮টি অভিযোগ করা হয়েছে চেয়ারম্যান মিলনের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়াও তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

লিখিত অভিযোগে ইউপি সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সকল সরকারি বরাদ্দ সদস্যদের সাথে সমন্বয় না করে নিজের ইচ্ছেমত বণ্টন করেছেন। ইউনিয়নে মাসিক কোনো সভা না ডেকে সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে চেয়ারম্যান ও সচিব সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন।

এমনকি প্রকল্প বাস্তবতায় কর্মকর্তার সহযোগিতায় তারা এ সমস্ত সরকারি বরাদ্দ তারা নিজেদের মত তালিকা করে দেন। উপজেলা পিআইও‘র সাথে চেয়ারম্যান সমন্বয় করে সবকিছু ভাগ বাটোয়ারা করে ভোগ করেন। চেয়ারম্যান সকল ইউপি সদস্যকে পরিষদে যেতে নিষেধ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।

এছাড়াও জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং বিভিন্নভাবে হয়রানী, বাহিরের আবেদন গ্রহণ না করা। ডানিডা, ননওয়েল, ওয়ান পার্সেন্ট, এডিবি, ট্যাক্স আদায়, টিআর, কাবিখা, কাবিটা কর্মসূচি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, রেশন কার্ড, টিসিবি, ভিজিডি কার্ড নিজের কাছে রেখে কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে পছন্দমত লোকদের দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে চেয়ারম্যান মিলনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার উজ জামান মিলন পরিষদে চাল না দিয়ে সরকারি গোডাউনে বসে চাল বিতরণ করেন। ইউপি সদস্যদের সম্মানী ভাতা দিচ্ছেন না, মৎস্য চাল, উন্নয়ন তহবিল, গভীর নলকূপ, মাসিক মিটিং এমনকি প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনও করছেন না। তিনি নিজের আত্মীয়দেরকে উদ্যোক্তা বানিয়ে তাদের দিয়ে ইউপি সদস্য ও সাধারণ জনগণকে হয়রানী করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেছেন ইউপি সদস্যরা।

অভিযোগপত্রে পরিষদের সদস্যরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এবং অভিযোগের যাতে সুষ্ঠু তদন্ত হয় সে বিষয়ে দাবি জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার উপ-পরিচারক ও উপজেলা নির্বাহী বরাবর।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ্জামান মিলিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সদস্যরা দিয়েছে কী-না আমার জানা নেই। তবে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। কেননা সদস্যরা যদি সাথে থাকে তবে চেয়ারম্যান দুর্নীতি করে কিভাবে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক গৌতম বাড়ৈ বলেন, আমি পূজার ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। তাই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিয়েছেন কী-না তা বলতে পারবো না। অভিযোগ দিয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেছেন, অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //