চাকরির নামে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণীর সাথে প্রতারণা

বরিশালে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণীর কয়েক লাখ টাকা, মোবাইল এবং ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়েছে ‘ইনস্ট্যান্ড নুডল্স’ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতারকরা। ঘটনাটি জানাজানি হলে গতকাল রবিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর নাজিরের পুল এলাকায় ‘ইনস্ট্যান্ড নুডল্স’ অফিসের সামনে জড়ো হয় প্রতারণার শিকার তরুণ-তরুণীরা।

তাছাড়া এই ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ডায়েরিতে আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাইদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ইনস্ট্যান্ড নুডল্স’ কোম্পানির বিভিন্ন পদে শর্তসাপেক্ষে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীসহ অনেকেই যোগাযোগ করে কোম্পানির লোকদের সাথে।

প্রতারণার শিকার সীমা আক্তার জানান, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিষ্ঠানটির লোকদের সাথে যোগাযোগ করেন তারা। এসময় তারা ঘুষ ছাড়া ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখান। তবে চাকরি প্রত্যাশীদের অবশ্যই ল্যাপটপ এবং স্মার্ট মোবাইল থাকতে হবে বলে শর্তজুড়ে দেন।

তিনি আরো জানান, নগরীর নাজিরেরপুল সংলগ্ন বহুতল ভবনের ৭ তলার একটি ফ্লাটে ইনস্ট্যান্ড নুডল্স কোম্পানির অফিসে গিয়ে দেখতে পান দুজন মেয়ে এবং দুজন পুরুষ অফিস করছেন। তাদের মধ্যে দুজন মেয়ে এবং একজন ছেলে অফিসের সামনে একটি রুমে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসেন। আর অফিসের বস পরিচয় দেওয়া অপরজন বসতেন ভিতরের রুমে।

সীমা বলেন, চাকরি পেতে সমিতি থেকে কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা তুলে একটি ল্যাপটপ কিনেছেন। সেই ল্যাপটপে কোম্পানির সফটওয়ার দেওয়ার কথা বলে অফিসে রেখে দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর অফিসে এসে ল্যাপটপ নিয়ে যেতে বলেন।

কিন্তু ২৮ অক্টোবর গিয়ে দেখি অফিস তালামারা। ভবনের কেয়ারটেকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘ছুটির দিন হওয়ায় অফিস বন্ধ’। পরে রবিবার পুনরায় অফিসে গিয়ে জানতে পাই প্রতিষ্ঠানের সবাই পালিয়েছে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ রয়েছে।

এই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি করা প্রতারণার শিকার নারী রোজেনা আক্তার রিদি জানান, কম টাকায় ল্যাপটপ কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইনস্ট্যান্ড নুডল্স কোম্পানির ম্যানেজার পরিচয়কারী আবু বক্কর সিদ্দিক গত ১২ অক্টোবর তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। তার সাথে আরো দুজন মেয়ে রয়েছে, তারাও একইভাবে ল্যাপটপ কেনার জন্য টাকা দিয়েছে। যারা টাকা দিয়েছে তাদের প্রত্যেককে একটি করে পরিচয়পত্রও দিয়েছে প্রতিষ্ঠান থেকে।

সবাইকে ২৮ অক্টোবর অফিসে এসে ল্যাপটপ নিয়ে যেতে বলে। রবিবার এসে জানতে পারি অফিসে তালা ঝুলিয়ে সবাই পালিয়েছে। তারা যেসব নম্বর দিয়েছে সেগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই উপায় না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রিদি।

রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে থাকা প্রতারণার শিকার একাধিক চাকরি প্রত্যাশী জানান, ইনস্ট্যান্ড নুডল্স কোম্পানিতে অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে চাকরি জন্য অবশ্যই ল্যাপটপ থাকতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়। শুরুতে ১৩ হাজার টাকা বেতন ছাড়াও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, যাতায়াত খরচের প্রলোভন দেখানো হয়।

এমনকি যাদের সাধ্য নেই তাদের ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ল্যাপটপ বা মোবাইল ১২-২০ হাজার টাকায় কিনে দেওয়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায়। এজন্য ল্যাপটপ ও মোবাইল কিনতে অন্তত ৫০-৬০ জন সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক ও সাইদুল নামের প্রতারক। এমনকি যাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল নিয়েছে তাদেরকে আগামী ১ নভেম্বর যোগদানের জন্য পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই সব কিছু নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

পুলিশ বলছে, এ ধরনের প্রতারক চক্র বা অপরাধীদের থেকে সাবধান থাকতে বাসা বা ফ্লাটভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড এবং ভাড়াটিয়া ফরম পুরণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে। কিন্তু নাজিরের পুলে প্রতারক চক্রকে অফিস ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি সেই নির্দেশনা।

তবে ভবনের মালিক বরিশালে না থাকায় প্রতারক চক্রের কাছে অফিস ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানা যায়নি। ভবনের মালিক খুলনায় থাকেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কেয়ারটেকার আব্দুল হাই।

তিনি বলেন, আমি ইতিপূর্বে খুলনায় ছিলাম। গত দুই সপ্তাহ আগে বরিশালে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছি। আমি এখানে যোগদানের পর থেকেই ওই অফিসের কার্যক্রম চলতে দেখেছি। আমার আগে একজন দারোয়ান ছিল সে ওই অফিস ভাড়া দিয়েছে। তবে কী শর্তে ভবনের প্লট ভাড়া দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন আব্দুল হাই।

এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এর সাথে জড়িত প্রতারকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।