ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৭ এএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৩ এএম
বরিশালের মুলাদী উপজেলার জয়ন্তী নদী থেকে প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬) অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
পরে কুশলের মরদেহ তার বড় ভগ্নিপতি একিউএম জিয়াউল হক জুয়েলের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে মুলাদী থানা পুলিশ। পাশাপাশি কুশলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কুশলের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ দেয়নি। তারপরেও মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ কী ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ভিন্নকিছু পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাসিরহাট নিজাম তালুকদারের বাড়ি সংলগ্ন জয়ন্তী নদী থেকে প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের মৃতদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
মুলাদী নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. হাবিব জানান, চার-পাঁচদিন ধরে মরদেহটি নদীতে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির পরনে শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট ছিল। পকেট থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। যেখানে কার্ডটি এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের বলে উল্লেখ করা ছিল। পরিচয়পত্রে ঢাকার সূত্রাপুর থানার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর বাসার ঠিকানা দেওয়া ছিল কার্ডে।
মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে ঢাকা সূত্রাপুর থানায় যোগাযোগ করা হয়। পরে সূত্রাপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে কুশলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃতদেহটি প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে কুশলের বলে আমরা নিশ্চিত হই। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, শ্যালকের মৃতদেহ বুঝে নেয়া ভগ্নিপতি একিউএম জিয়াউল হক জুয়েল জানান, পরিবারের তেমন কারো সঙ্গেই কুশলের কথাবার্তা হতো না, তবে মায়ের সাথে কথা বলতেন। গত ২১ অক্টোবর সকালে মায়ের সঙ্গে কথা বলে বাসা থেকে বের হয় কুশল।
তিনি বলেন, ‘খুলনায় কুশলের নতুন একটি চাকরি হওয়ার কথা। সেখানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার দুদিন পর মায়ের সাথে তার মুঠোফোনে শেষ কথা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি কুশলের মরদেহ বরিশালের মুলাদী উপজেলাধীন জয়ন্ত নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আপাতত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়া হচ্ছে না। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন কিছু উঠে আসলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত কুশলের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি, পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুরাইন কবরস্থানে বাবা ও বড়ভাইয়ের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
কুশলের মৃতদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেফায়েতুল ইসলাম বলেন, অর্ধগলিত থাকায় মরদেহের শরীরের তেমন কোথায় আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করা যায়নি, তবে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কোনো অসঙ্গতি থাকলে প্রতিবেদনে উঠে আসবে।
বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কুশলের মৃতদেহ কীভাবে বরিশালে এলো তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরাও দ্বিধায় রয়েছে। তবে আমাদের ধারণা ঢাকার আশপাশে কোথাও তার মৃত্যু হতে পারে। পরে মৃতদেহটি ভাসতে ভাসতে বরিশালে এসেছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। তার সবশেষ অবস্থান কোথায় ছিল, কার সাথে যোগাযোগ হয়েছে, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সেগুলো জানার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরকে হত্যার ঘটনায় ২০১৪ সালে ছোট ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে পরিবারের কারো সঙ্গেই তেমন যোগাযোগ ছিলো না তার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh