শেরপুরে অবৈধ ইটভাটায় হুমকিতে ৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ইন্দিলপুর এলাকার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বসত বাড়ির মধ্যবর্তী কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মেসার্স ফাতেমা ঝিকঝাক অটো ব্রিকস নামে একটি অবৈধ ইটভাটা।  

এর দূষিত ধোঁয়া আর ময়লায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

ইতোমধ্যে এর বিরূপ প্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন। অপরদিকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ির কাছাকাছি দূরত্বে অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা পরিচালনায় প্রশ্ন উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে। স্থানীয়দের দাবি, বছরে একবার এসে ইটভাটার বিরুদ্ধে নামে মাত্র জরিমানা করা হয়। পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। গতকাল রবিবার (১২ নভেম্বর) সরেজমিনে গেলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা হলে ওঠে আসে এমন তথ্য। 

জানা যায়, অবৈধ মেসার্স ফাতেমা ঝিকঝাক অটো ব্রিকস ইটভাটা থেকে ২২০ মিটারের মধ্যে তেজার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০০ মিটারের মধ্যে ইন্দিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইন্দিলপুর আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়, ৬০০ মিটারের মধ্যে ইন্দিলপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০০ মিটারের মধ্যে ইন্দিলপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আর হাফিজিয়া মাদ্রাসা অবস্থিত।  

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে প্রায় ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এতে চরম হুমকির মুখে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এসব ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় চরম হুমকির মুখে পড়েছে ইটভাটা সংলগ্ন বাসিন্দা ও সবুজ শ্যামল ধান ক্ষেতসহ কৃষি জমি। 

ইটভাটায় জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহারে তিন ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, আমার নারিকেল গাছে এখন আর নারিকেল আসেনা। সবজি ক্ষেত নষ্ট হইতাছে। প্রতিবেশী শামিম মিয়া, শমসের আলী ও মকবুল হোসেন সহ অনেকে জানান, ইটভার কালো ধোঁয়ায় আমাদের বাড়ির কোনো গাছ পালায় ফল আসে না। এখন মরে যাচ্ছে। ক্ষেতের মাটি নেওয়ায় এখন ফলন কমে গেছে। 

সরেজমিন গেলে দেখা যায়, এই অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে শতশত সেফটি বনের কাঠ পুড়ানোর জন্য রাখা হচ্ছে। এ অভিযোগ অনেক পুরোনো।

এ ব্যাপারে ইন্দিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে অনেকে হাঁপানি, এলার্জি, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বছরে একবার এসে ইটভাটার বিরুদ্ধে নামে মাত্র জরিমানা করা হয়। পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভাটা অপসারণ দাবি করছি।

এ ব্যাপারে মেসার্স ফাতেমা ঝিকঝাক অটো ব্রিকসের মালিক ফারুক মিয়া বলেন, আমি ইটভাটার অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। তাছাড়া ইটভাটা সমিতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইফতেখার ইউনুস বলেন, পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী-পরিচালক আল মাহমুদ বলেন, ইটভাটা স্থাপনের মতো পরিবেশ না থাকায় তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেরপুর সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, কালো ধোঁয়ার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরো ক্ষতিকর যে সমস্ত পদার্থগুলো বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //