দায়িত্ব নিলেন মেয়র খোকন, ফান্ডে পেলেন ১২ কোটি টাকা

নির্বাচিত হওয়ার দীর্ঘ চার মাস পর সহধর্মিণী ও ছেলেকে সাথে নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব বুঝে নিলেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের অনুপস্থিতিতে নবনির্বাচিত মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার।

তবে নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ বা অভিষেক অনুষ্ঠানে যাননি সদ্য বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু ও রফিকুল ইসলাম খোকন এবং বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরসহ তাদের অনুসারীরা।

এর আগে দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে নগর ভবন চত্বরে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

বরিশালবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই বরিশাল সিটির সিনিয়র সিটিজেনদের বিশেষ সেবা প্রদান করা হবে। আমার নির্বাচনী ইশতেহারের ৩৫টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের যে ঘোষণা দিয়েছি, সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিবো। বরিশালকে একটি স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

সিটি করপোরেশনকে সঠিক জবাবদিহিতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এখানে কোনো হিংসা, বৈষম্য থাকবে না। নতুনভাবে মানুষের সেবায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও উন্নয়নে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশন বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকা দেনা আছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ফাণ্ডে জমা পেয়েছি ১২ কোটি টাকা। তবে এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন নবনির্বাচিত মেয়র।

এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, বরিশাল অবহেলিত ছিল। এই অবহেলিত বরিশালকে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। অতিতে কে কী করেছে তার উদাহরণ না দিয়ে বরিশালবাসির আশা আকাঙ্ক্ষা পুরণ করতে হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে আমি মেয়রের পাশে থেকে সহযোগিতা করবো।

তিনি বলেন, আমরা চাই বরিশালের উন্নয়ন হোক। বরিশালের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী ৭৯৭ কোটি টাকা পাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরিশালের কথা বিবেচনা করে আরো ৮০ কোটি টাকা অনুদার সরূপ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চান বরিশাল যাতে এগিয়ে যায়। আমরা বরিশালকে শ্রেষ্ঠ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

এসময় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলকে মোকাবেলা করতে হবে। নৌকার যে প্রার্থী হবে আপনারা তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। নৌকা হলে বরিশালের উন্নয়ন হবে, না হলে উন্নয়নের মুখ থুবরে পড়বে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলীর সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার নগরীর বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন, খাল পুনঃখননসহ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদার ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব:) হাফিজ মল্লিক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আনোয়ার হোসেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, র‍্যাব-৮ এর অধিনায়ক মেজর জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস প্রমুখ।

অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত তার স্ত্রী লুনা আবদুল্লাহ ও ছেলে আবিদুর রহমান সেরনিয়াবাত প্রত্যুশকে সাথে নিয়ে নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কার্যালয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি নগরীর বাংলা বাজার এলাকার একটি মসজিদের বিলে সই করেন।

এর আগে দাপ্তরিক কাগজপত্রে সই করে দায়িত্ব বুঝে নেন নির্বাচিত মেয়র। পরে দোয়া-মোনাজাত হয়। এরপর নবনির্বাচিত মেয়রকে মিষ্টিমুখ করান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।

এদিকে, অভিষেক অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চের সামনের দিকে ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে কয়েক দফা হাতাহাতি এবং মারামারি হয় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের মধ্যে। এসময় তারা অনুষ্ঠানস্থলে থাকা চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে। এতে অনুষ্ঠানস্থলে কয়েক দফা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে সকাল থেকেই নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর ফলে শহরের জিলা স্কুল মোড় থেকে কাকলীর মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ পথচারীরা।

তাছাড়া জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচরা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং পরে নবনির্বাচিত মেয়রের জীবনী নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //