বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক হয়েও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের বিরুদ্ধে। যা বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ ধারা এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে শাম্মী আহমেদের দাবি সংবিধান মেনেই প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
শাম্মী আহমেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামের মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বরিশাল-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ একসঙ্গে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
অস্ট্রেলিয়ান ইলেকট্রোরাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, শাম্মী আহমেদ গত ২৯ নভেম্বর যেদিন মেহেন্দিগঞ্জে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেদিনও তিনি অস্ট্রেলিয়ার ভোটার ছিলেন, যা এখনো বহাল আছে।
বিধি অনুযায়ী, শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব সারেন্ডার করার কথা থাকলেও সেটিও তিনি করেননি বলে দাবি নেতাদের। আর তা যদি সত্যিই হয়, তবে তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া ছাড়াও বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে প্রার্থী অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৬৬ ধারায় আরো উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে ও পরবর্তীতে উক্ত ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে; কিংবা অন্য ক্ষেত্রে, পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন বলে গণ্য হবে না।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদ শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে এসব বিষয়ে কথা বলতে পারছি না। তবে আমি যা করেছি বাংলাদেশের সংবিধানের সব কিছু মেনেই করেছি।
এদিকে দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে বরিশালের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কেএম আজাদ রাহমান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি বাংলাদেশের বাইরে আরেকটি রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন।
ওই সময় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তবে পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাকে নির্বাচনের বৈধতা দেওয়া হয়। দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল। এখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো দ্বৈত নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা আসবে না বলে জানান এই আইনজীবী।
তবে বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের রিটার্নিং অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান এবং নির্বাচন বিধিমালায় সংসদ নির্বাচনে যোগ্যতা এবং অযোগ্যতার ক্ষেত্রে যা বলা আছে সেভাবেই হবে। যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh