ভুক্তভোগীর সঙ্গে ধর্ষণ মামলার আসামির বিয়ে

ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বেঞ্চের আদেশে এক চাঞ্চল্যকর ও ব্যতিক্রমী বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ঝিনাইদহ কোর্ট চত্বরে। জজ আদালতের বিচারক মো. নাজিমুদ্দৌলার আদেশে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। সেখানে আসামি মিকাইল হোসেন গত ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ধর্ষণ করে ভুক্তভোগীকে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদি হয়ে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ের শর্তে জামিন পান মিকাইল। কোর্ট চত্বরে ভুক্তভোগী ও আসামির বিবাহ সম্পন্ন হয়। পিতৃত্বের স্বীকৃতি পায় তাদের ঔরসজাত ৩ মাসের সন্তান।

সরেজমিনে দেখা যায়, মায়ের কোলে আদালত চত্বরে ঘুমাচ্ছে মাত্র ৩ মাসের বাচ্চাটি। সে জানেই না এ পৃথিবীতে সে পরিচয়হীন হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছে। তার বাবা-মায়ের বিয়ে হলো তারই জন্মের তিন মাস পর।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগীকে প্রায় একবছর পূর্বে ভয় দেখিয়ে ও ফুসলিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মিকাইল হোসেন। এরপর ভুক্তভোগীর মা কোটচাঁদপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে আসামি মিকাইলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

কিন্তু মিকাইল ও তার পরিবার এ ঘটনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে আসছিল। এদিকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী এবং গত তিন মাস আগে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। একপর্যায়ে বাদী পক্ষের আইনজীবীর দাবিতে ডিএনএ টেষ্টের অনুমতি প্রদান করে আদালত। সেখানে ডিএনএ টেষ্টে ভুক্তভোগীর গর্ভজাত সন্তান যে মিকাইলের তা প্রমাণ হয়। এরপর আদালত আলিফের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ও বাদী-বিবাদীর মধ্যস্থতায় ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিবাহ সম্পন্ন করে জামিনে মিকাইলকে মুক্তি প্রদান করে ।

মিকাইলের বাবা মিজানুর রহমান জানান, কোর্ট যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা আমরা মেনে নিয়েছি । ছেলে-বৌ সংসার করুক ।

সাধারণ মানুষ জানান, এ ধরনের ঘটনা সত্যিই সচরাচর দেখা যায় না । আদালত যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছে । একদিকে মেয়েটি তার ঠিকানা পেল, অন্যদিকে ছোট্ট বাচ্চাটি তার পিতৃত্ব পরিচয় পেল ।

এদিকে ভুক্তভোগী জানান, আমি এ রায়ে খুশি । তবে ভবিষ্যতে সংসার সুখের হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মনজরুল ইসলাম জানান, কোর্টের রায় যা হয়েছে তাতে পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ নেই ।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. সরদার মনিরুল ইসলাম মিল্টন জানান, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলায় যুগান্তকারী রায় প্রাদান করেছেন আদালত। কারণ এ ধরনের রায় সত্যিই বিরল। আমরা সবই খুশী ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //