মসজিদের সোয়া ৩ কোটি টাকা তুলে নিলেন নৌকার প্রার্থী

নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ নিজের ঋণ পরিশোধে স্থানীয় চৌমুহনী বড় মসজিদের দুইটি ব্যাংক হিসাব থেকে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ওই মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

গতকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চৌমুহনী বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের নামে সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের স্থানীয় শাখার হিসাব বিবরণীতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এতে জানা গেছে, সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরন তার ম্যানেজার মহিউদ্দিনের মাধ্যমে গত ২৩ নভেম্বর সাউথইস্ট ব্যাংক চৌমুহনী শাখা থেকে দুই কোটি এবং ২৬ নভেম্বর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চৌমুহনী শাখা থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) ঋণখেলাপির দায়ে নোয়াখালী-৩ আসনের নৌকা মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। পরে ওইদিন রাত থেকে এমপির লোকজন ফেসবুকে একটি পে-অর্ডারের ছবি দিয়ে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি প্রচার করছেন। এতে দেখা যায়, গত ২৬ নভেম্বর মামুনুর রশিদ কিরণ ইসলামী ব্যাংকের একটি পে-অর্ডারে এ এস টি ভেভারেজ অ্যাকাউন্টে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন। ওইদিনই তিনি মসজিদের কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছিলেন।

ব্যাংক থেকে টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে চৌমুহনীর সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নুর উদ্দিন আবসার এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে মসজিদের দুই ব্যাংকের হিসাব বিবরণী গণমাধ্যমের কাছে সংরক্ষিত আছে বলার পর তারা বলেন, হিসাবের মালিক চেক দিলে ব্যাংক টাকা দিতে বাধ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৌমুহনীর একজন ব্যবসায়ী বলেন, মসজিদের টাকায় জনগণের সম্পৃক্ততা আছে। সেখানকার টাকা কোথাও দিতে হলে অন্তত পরিচালনা কমিটির লোকজনকে জানাতে হবে। সভাপতি-সেক্রেটারি নিজেদের মতে রেজুলেশন ছাড়া মসজিদের টাকা তুলে নেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। বিষয়টি জানাজানি হলে মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

চৌমুহনী বড় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামছুল হকের কাছে মসজিদের হিসাব থেকে টাকা তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো তথ্য দেবেন না বলে জানান। পরে হিসাব বিবরণী আছে জানানোর পর তিনি বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। নির্বাচনের পরে যোগাযোগ করবেন।

মামুনুর রশিদ কিরণের ম্যানেজার মহিউদ্দিন টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় দুই ব্যাংকের হিসাব থেকে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা তোলা হয়েছে। সময়মতো তা পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

তবে অভিযুক্ত সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মেসেজ দিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //