জিএম কাদের বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন: উপদেষ্টা তাপস

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের পরিস্থিতির শিকার। তিনি বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আরও বেশ কয়েক দিন বাকি আছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

আজ রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোড এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে এ কথা বলে তাপস।

প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। তিনি বরিশাল-৫ (সিটি করপোরেশন-সদর উপজেলা) এবং বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ইকবাল হোসেন তাপস গণমাধ্যমকে বলেন, জাতির ক্রান্তি লগ্নে আজকে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সকল মানুষ তাকিয়ে আছে। কিন্তু সরকারের যে ভোট চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পারবে?

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন, ২০১৮ সালের নির্বাচন সবাই দেখেছেন। সে নির্বাচন কিভাবে হয়েছে। আমরা এ বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি সেখান থেকে বলতে চাই, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার ও সরকার মিলে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেছে।

তাপস আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার দল গঠনতন্ত্রের ওপর আস্থা রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। তার মধ্যে কিছু যাচাই-বাছাইয়ে বাদ দেওয়ার পরে ২৮৭ জন টিকে আছেন। তারা নির্বাচনের মাঠে আছেন। তারমধ্যে আমিও প্রার্থী হিসেবে পর্যবেক্ষণে ছিলাম। নির্বাচনী মাঠে আমরা যা দেখেছি তার শেষ পরিণতি বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় একজন নিহত হয়েছেন। যেই মাঠে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনার বলে যাচ্ছে, মোটা দাগে কোন সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন কমিশনারের এমন আচরণ ও বক্তব্য দেখে আমাদের মনে দিন দিন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন মুখে বলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাদের কর্ম এবং অন্যান্য আচরণে মনে হচ্ছে তারা একটি দল এবং সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

গণমাধ্যমের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একেক জনের পঞ্চাশ হাজার গুণ, ষাট হাজার গুণ, দশ হাজার গুণ সম্পদ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। নির্বাচনী হলফনামায় সেটি প্রকাশও করেছেন। সেখানে এক ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছে পাঁচ হাজার টাকা, এক একর জমির দাম দেখিয়েছে এক হাজার টাকা, দুই হাজার টাকা। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একজন মন্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ দেশের বাইরে আছে। তা হলফনামায় প্রকাশ করা হয়নি। তারপরেও আমাদের নির্বাচন কমিশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

সব শেষে তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে আগামী ৭ জানুয়ারি প্রহসনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেই নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে আছে একটি দল এবং সেই দলের লেজুড় ভিত্তিক কিছু মানুষ। তারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাই উত্তম। তাই আজকে আমার কর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে বলতে চাই, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //