খুলনায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ভোট গ্রহণ

দুইজন প্রার্থীর ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে ককটেল উদ্ধার, নৌকা প্রতীকের বাইরে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকা, নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল, নৌকার ভূয়া এজেন্ট আটকসহ বিছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার (৭ জানুয়ারি) খুলনার ছয়টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 

ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ের প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুষ্ঠিত হয়। তবে খুলনা-৪, ৫ ও ৬ আসনে প্রভাবশালী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও তা হয়নি। ফলে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, খুলনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী এবং খুলনা-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক নানা অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন। 

অপরদিকে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার অসংখ্য বুথ ঘুরে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকের এজেন্টের বাইরে দুই/একটি কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট নেই। এছাড়া ডুমুরিয়ার একটি কেন্দ্রে নৌকার একজন ভুয়া এজেন্টকে আটক করা হয়। এসময় একটি ভোট কেন্দ্রের সামনে থেকে একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়।

নির্বাচনের শুরুতে খুলনার ছয়টি আসনের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই ফাঁকা ছিল। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারদের সামান্য উপস্থিতির মধ্যে বয়স্ক নারী পুরুষের সংখ্যায় বেশি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাটারের উপস্থিতি বেড়ে যায়। 

কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রের বুথগুলোতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকার এজেন্ট ছাড়া তেমন কোন এজেন্ট ছিল না। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খুলনা-২ আসনের আওতাধীন মহানগরীর মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শুভঙ্কর সরকার জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৬১ টি, সাতটি বুথ রয়েছে এখানে। এই কেন্দ্রে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের এজেন্ট ছাড়া কোন এজেন্ট পাওয়া যায়নি। 

একই আসনের হাজী আব্দুল মালেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় ভোট পড়েছে ৭০ টি। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার পরিমল বিশ্বাস জানান, ভোটার উপস্থিতি কম, যারা আসছেন বয়স্ক। এই কেন্দ্রের সাতটি বুথের মধ্যে ছয়টিতে নৌকার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না। তবে একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট ছিল। একইভাবে হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া কলেজ শেখ হাসিনা মহিলা কেন্দ্র এবং হাজী আব্দুল মালেক ইসলামিয়া কলেজ অ্যাকাডেমিক ভবনে গিয়েও ভোটারদের কোন সিরিয়াল দেখা যায়নি। ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। অ্যাকাডেমিক ভবন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এ কে এম মাজহারুল আলম বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৯৩টি। এ কেন্দ্রেও নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্ট তেমন ছিল না।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা-৪ আসনের দিঘলিয়া এমএ মজিদ ডিগ্রী কলেজ ও দিঘলিয়া (দঃ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে শুরুতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সরকারি এম এ মজিদ ডিগ্রী কলেজ পুরুষ কেন্দ্রে ৩০০ জনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

স্থানীয় লোকমান শেখ ভোট দেয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ভোট দিয়ে বের হলাম। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট দিতে আসার পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করেনি।

অপরদিকে, খুলনা-৬ আসনের কয়রা উপজেলার বা‌মিয়া মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয় কেন্দ্রের প্রতি‌টি ক‌ক্ষে বয়স্ক‌দের এনে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা যায়। মা‌ঠে কোন ভোটা‌রের লাইন ছিল না। 

এদিকে, খুলনা-১ তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ভোট বর্জন করেন। তার অভিযাগ, দাকোপ উপজেলার বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রে এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তারা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়নি। 

একইভাবে খুলনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথীও নির্বাচন বর্জন করেছেন। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এস এম কামাল এবং তার সমর্থকরা তার কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং তাকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তিনি ফেসবুক ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার দিয়েছেন।

অপরদিকে, খুলনা-৫ আসনের একটি ভোটকেন্দ্র থেকে একজন ভূয়া পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়। বেলা ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা বিরাজময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। ওই কেন্দ্রে তিনি নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন।

আটক জিল্লুর বাগাতি ডুমুরিয়া উপজেলার পূর্ব-শোভনা গ্রামের নওশের বাগাতির ছেলে।

ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমাইল হোসেন বলেন, কেন্দ্রটিতে গিয়ে এজেন্টের দেখতে চাইলে তিনি নিজেকে এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তবে কোনো নিয়োগপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলার কূলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সাংবাদিক এবং ঈগল প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে গণনার সময় উপস্থিত থাকতে চাইলে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার সনাতন সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট এবং সাংবাদিকদের একটি টিমকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় তারা গণনার সময় থাকার আইনি ভিত্তি রয়েছে- উল্লেখ করলে নৌকা প্রতীকের সমর্থক দুই-তিন শতাধিক যুবক সেখানে এসে বিশৃঙ্খলা শুরু করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা সেখান থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন। ওই কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের অভিযোগ করেছেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আকরাম হোসেন। একই সঙ্গে তিনি সেখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে বলেও অভিযোগ করেন। 

এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারকে তার রেফারেন্স দিয়ে জানাতে বলেন গণনার সময় সেখানে এজেন্ট এবং সাংবাদিকদের থাকার আইন রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //