যশোরে নিউমোনিয়া-ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

৭ মাসের শিশু হুসাইন। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মাঝিয়ালী গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। মা রোজিনা বেগম জানান, কনকনে শীতের কারণে হুসাইন বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। বাড়িতে রেখে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) গভীর রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, হুসাইন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের টিপু সুলতানের দুই মাসের সন্তান তাওফা শিশু ওয়ার্ডের ৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। পাশে বসে আছেন মা রহিমা খাতুন। নিউমোনিয়া-ডায়রিয়া ও কাঁশিতে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ দিন ধরে হাসপাতালে। গতকাল বুধবার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, হুসাইন ও তাওফার মতো ৩৯ শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।

এদিকে বিদ্যালয় চলাকালীন বর্ষা (১৪) নামে এক ছাত্রী শীতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সে যশোর রেলগেট এলাকার মিজান মাতুব্বরের মেয়ে ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়া গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন শিশু বিভাগের সামনে অসংখ্য রোগীদের ভিড় থাকছে। শিশুদের পাশাপাশি মেডিসিন বিভাগেও শীতজনিত রোগী বেড়েছে। 

যশোরের বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৭ জানুয়ারি (বুধবার) যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৬ জানুয়ারি ১৪ ডিগ্রি সেলসেয়িাস, ১৫ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ জানুয়ারি ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১০ জানুয়ারি ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বলিয়ে অল্প গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের শীত ও আয়ে টান পড়ায় কষ্ট সীমাহীন। একই ধরণের কথা জানালেন দড়াটানায় অবস্থান করা রিকশা চালক নুর হোসেন ও শহর আলী। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা উপার্জনের সন্ধানে যেতে পারছেন না। তারপরও অনেকে বাধ্য হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, শীতের প্রকোপের সাথেই বেশিরভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত ১ সপ্তাহে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজারের বেশি রোগী শতাধিক। ৩ হাজারের বেশি রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। রোগ প্রতি শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যেকোনো ওষুধ সেবন না করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী জানান, প্রচণ্ড শীতে শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, শীতের কারণে যশোরে অনেকে ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি কাঁশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। চিকিৎসাসেবায় চিকিৎসক ও সেবিকারা রোগীদের রাত-দিন চিকিৎসাসেবা করছেন। 

যশোরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানান, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সরকারিভাবে ৬১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান, তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকালে শিক্ষার্থীদের স্কুল আসতে কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু সরকারিভাবে নির্দেশনা এসেছে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে থাকলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করার।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //