মিয়ানমারের ৯৫ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এলো বাংলাদেশে

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় ৯৫ সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১৫ সদস্যর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাখাইনে তুমুল লড়াইয়ের প্রভাবে থমথমে ঘুমধুম সীমান্ত মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধের প্রভাবে বান্দরবানের ঘুমধুমসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

মিয়ানমার থেকে আসা গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশে। গুলিতে অন্তত তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। উড়ে আসা গোলার আঘাতে পুড়ে গেছে অন্তত তিনটি বাড়ি।

মিয়ানমারের রাখাইনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্য ও সাধারণ অনেক নাগরিক আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশে। এরইমধ্যে আহত বেশ কয়েকজনকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বিজিবির বিভিন্ন ক্যাম্পে।

রাখাইনে সংঘর্ষ চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক হামলা করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় রোববার বিকেলে কয়েক দফায় হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নজরুল ইসলাম টিটু নামে বাংলাদেশি এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘তুমব্রুর পশ্চিম কুল এলাকায় টিটু নিজ বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন প্রবীর চন্দ্র ধর নামে এক ব্যক্তি। তিনি ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা।

আনোয়ার আরও জানান, ‘শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে বেশ কিছু গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে কমপক্ষে তিনটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে বাইশফাঁড়ি এলাকার প্রবাসী নুরুল কবীরের বাড়িতে বারুদের গোলা পড়ায় বাড়িটি ভস্মীভূত হয়েছে। আগের দিন শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি গুলি এসে অটোরিকশায় লেগে এর কাচ ভেঙে যায়।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘সীমান্তের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

বিজিবির কক্সবাজারস্থ ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল আশরোকি বলেন, ‘বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে রাত থেকে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে কয়েকজন বিজিপি সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে। এদের বিজিবির ঘুমধুম সীমান্ত বিওপিতে রাখা হয়েছে। বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র ও গুলি বিজিবির কাছে জমা রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //