বেনাপোলে স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট, বাড়ছে অপরাধ

বেনাপোল বন্দর ও চেকপোস্টে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াতে ব্যবহৃত ৪টি স্ক্যানিং মেশিনের মধ্যে ৩টিই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৫ মাস ধরে। ফলে বাড়ছে স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানান অনিয়ম। এপারের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কাস্টমস ও বন্দর পেরিয়ে অবাধে স্বর্ণসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য আটক হচ্ছে ওপারের পেট্রাপোল সীমান্তে। গত ৪ মাসে ২৫ পাচারকারীকে আটক হয়েছে।

জানা গছে, বেনাপোল সীমান্তে বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৪টি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে। এর মধ্যে একটি মোবাইল স্ক্যানার স্থাপন করা হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে। অত্যাধুনিক এ মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম।

এছাড়া বেনাপোল চেকপোস্টে ও রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন- কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে আরো ৩টি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। তবে স্ক্যানিং মেশিনগুলোর মধ্যে ৩টি যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ায় গত ৫ মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এ পথে। এতে অবাধে আমদানি পণ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রীর মাধ্যমে স্বর্ণ ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চোরাচালান ব্যাপক হারে বেড়েছে।

এছাড়া জানা গেছে, ঢাকা-কলকাতা রুটে যাত্রী নিয়ে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।

গত ৫ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বর্ণ ও বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যসহ ২৪ জন পাচারকারী আটক হয়। এদের মধ্যে তিনজনকে বাংলাদেশে কাস্টমস ও বিজিবি সদস্যরা আটক করে এবং ২২ জনকে আটক করেছে পট্রোপোল বন্দর ও কাস্টমস নিরাপত্তায় নিয়োজিত সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। এদের মধ্যে রয়েছেন স্বর্ণের বারসহ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ১৫ জন, ভারতীয় পাসপোর্টধারী ছয়জন ও ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকচালক চারজন।

এ রুটে চলাচলকারী শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক মনিরুল ইসলাম, হেলপার রসিক মন্ডল, ও সুপারভাইজার হাবিবুরকে আটক করে বিএসএফ। ১৩ জানুয়ারি ২০০ গ্রাম স্বর্ণসহ চট্টগ্রামে দুই পাসপোর্টধারী সমধর ও মিনুধরকে আটক করে বিএসএফ। ৯ জানুয়ারি ৩০০ গ্রাম স্বর্ণসহ ৫ পাসপোর্টধারী ভারতীয় নারীকে আটক করে বিএসএফ।

এর আগে ২২ ডিসেম্বর ২টি স্বর্ণের বারসহ কল্যাণ রায় নামে এক ভারতীয় ট্রাকচালককে আটক করে বিএসএফ। ৫ ডিসেম্বর ৬০০ গ্রাম স্বর্ণ সহ ভারতীয় পাসপোর্টধারী মোহাম্মদ কুনলী আদুকাকে আটক করে বিএসএফ। ৪ ডিসেম্বর ১২৫০ কেজি গাঁজাসহ বাংলাদেশগামী একটি ট্রাক আটক করে ভারতীয় পুলিশ।

এছাড়া ১ নভেম্বর ভারতীয় ট্রাকচালক সুরজ মগকে পট্রোপোল বন্দর থেকে ৭ কেজি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিএসএফ, ২৭ নভেম্বর ১৭টি স্বর্ণের বারসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আব্দুল জহাব মল্লকিকে আটক করে বিএসএফ। ২৬ সেপ্টেম্বর সঞ্জীব নামে এক ভারতীয় ট্রাকচালককে ৬টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিএসএফ। শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক মোহাম্মদ, দেলোয়ার ও সুপারভাইজার শামিম মাহমুদকে ১১টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিএসএফ।

১৩ অক্টোবর বেলাল, কবীর, আজম খান ও জবেদা খাতুন নামে ৪ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীকে ২২টি স্বর্ণের বার ও ৪টি ব্রেসলেটসহ আটক করে বিএসএফ।

১১ অক্টোবর মানিক মিয়া নামে এক পাসপোর্টধারী যাত্রীকে ৯০ হাজার ইউএস ডলারসহ আটক করে বিজিবি। ২৯ জানুয়ারি ২টি স্বর্ণের বারসহ মেহেদী হাসান নামে এক পাসপোর্টধারী যাত্রীকে আটক করে বেনাপোল কাস্টমস এবং ৩০ জানুয়ারি ৭৬ হাজার ৫০০ ইউএস ডলারসহ নাসরিন আক্তার নামে এক পাসর্পোটধারী যাত্রীকে আটক করে বেনাপোল কাস্টমস।

পণ্যবহনকারী ট্রাকচালক মহাসিন খান জানান, বন্দরে স্ক্যানিং মেশিনগুলো সচল থাকলে এভাবে চোরাচালান সম্ভব হতো না। জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে অংশে স্ক্যানিং সচল করা দরকার।

ভারতগামী পাসপোর্টধারী আল মামুন জানান, এপারে স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় অবাধে ওপারে মূল্যবান সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশে কাস্টমস অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ জানান, স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যের নামে চোরাচালানে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা। এতে অপরাধ বাড়ছে ও সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি- রপ্তানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট থাকায় এদেশ থেকে স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ পাচার হচ্ছে ভারতে। বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করা জরুরি।

স্ক্যানিং মেশিনে তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক বনি আমিন জানান, স্ক্যানিং মেশিন মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস তার ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্ক্যানিং মেশিন ৩টির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন ৬ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ও ৫ শতাধিক ট্রাকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দর ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনে স্ক্যানিং পরিচালনা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব স্ক্যানিং নষ্ট থাকায় চোরাচালানের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত স্ক্যানিং ঠিক করতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার- হাফিজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি লিখেছি আশা করি দ্রুতই এটা সমাধান হয়ে যাবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //