পাবনায় শিক্ষককে পেটাল ৩ দপ্তরি

পাবনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আরিফুজ্জামানকে শত শত মানুষের সামনে বেদম পিটিয়েছেন তিন দপ্তরি। এ ঘটনার বিচার ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার বালিয়াহালট স্কুল মাঠে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালে শিক্ষক আরিফুজ্জামানকে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। প্রহৃত আরিফুজ্জামান সদর উপজেলার ৪০নং হেমায়েতপুর বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি ঘটনার বিচার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত তিন দপ্তরি হলেন- শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি সজিব (৩০), চকপৈলানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি বাপ্পী (২৮) ও কৃঞ্চপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি রতন (৩০)।

এ বিষয়ে শিক্ষক আরিফুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার তিনি সদর উপজেলার বালিয়াহালট স্কুল মাঠে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় তিনি দক্ষিণ রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি সজিবকে খেলা শুরুর প্রান্তিক লাইন থেকে একটু দূরে সরে যেতে বলেন। এতেই দপ্তরি সজিব শিক্ষক আরিফুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এসময় তিনি নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিলে সজিব আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কিল-ঘুসি লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে অন্য দুই স্কুলের দপ্তরি বাপ্পী ও রতন এসে সজিবের সঙ্গে যোগ দেন এবং তিনজন মিলে উপর্যুপরি কিল-ঘুসি ও লাথি মারতে মারতে তাকে মাটিতে ফেলে দেন। দপ্তরিরা শিক্ষককে মারতে মারতে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। এসময় সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইদা শবনমসহ অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করেন।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষক আরিফুজ্জামান আরো উল্লেখ করেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এগিয়ে আসার পর তার সামনেই সজিব তার বুকে লাথি মারেন।

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার ছুটির দিন শিক্ষকরা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এবং অভিযুক্ত তিন দপ্তরির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এসময় সদর উপজেলা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইদা শবনমসহ সব উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক মির্জা আনোয়ারুল হক, একরামুল কবির মামুন, মো. জাকির হোসেন, মারুফ হায়দার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, এসব দপ্তরির অধিকাংশই রাজনৈতিক সুপারিশে নেওয়া হয়েছে। এজন্য তারা স্কুলে সবার সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। অনেকে ভয়ে নীরবে সহ্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে পাবনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোছা. ফাতেমা খাতুনের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করলে তিনি জানান, আমরা অভিযোগের বিষয়ে জানি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব দপ্তরি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে বার্ষিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়ে থাকে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাবসহ নানা অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক যা যা সম্ভব তা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //