পাবনায় চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পেঁয়াজ পাহারায় কৃষক

পেঁয়াজের ভাণ্ডার নামে খ্যাত পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলার হাট-বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি ম পেয়াজ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে এমন দাম অনেকটাই অস্বাভাবিক। আর এই অস্বাভাবিক দামের কারণে মাঝে মধ্যেই রাতের অন্ধকারে ক্ষেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। চুরি ঠেকাতে রাত জেগে লাঠি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন দুই উপজেলার কৃষকেরা। কোনো কোনো পেঁয়াজ চাষি আবার চোরের ভয়ে পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলায় ১৮৮০ হেক্টর জমিতে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ২৮৪০ হেক্টর। সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ। বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে।

সরেজমিনে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জোরদহ গ্রামের ইসাক হাজীর খাকছাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। সাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়া গ্রামের হাবুল মানিক মন্টু এক সপ্তাহে ইমদাদুল হকসহ প্রায় দশজন কৃষকের পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তিন থেকে চার মণ পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে চাকলা গ্রামের ক্ষেত গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ পাহারার জন্য ক্ষেতের পাশে তুলেছেন কুড়ে ঘড়। খানিকটা দূরে দূরে এরকম ঘর তুলে তিন/চারজন করে বসে আড্ডা দিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন পেঁয়াজ।

কৃষকেরা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ক্ষেতের সব পেঁয়াজই বেশ বড় হয়েছে। এ পেঁয়াজ তুলতে সময় লাগে না। একজন আধাঘণ্টা সময় পেঁয়াজ তুললে এক থেকে দেড় মণ পেঁয়াজ তুলতে পারে। তাই সুযোগ মতো দুই-তিনজন চোর এসে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুই-তিন মণ পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

বেড়া চাকলা গ্রামের কৃষক সাইফুল মোল্লা জানান, আমি চার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়েছি। দুই বিঘা বিক্রি করেছি। অনেক গ্রামেই পেঁয়াজ চুরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুরি হওয়ার ভয়ে আমরা সবাই মিলে রাতে পেঁয়াজ পাহারা দিচ্ছি। দাম বেশি তাই কাঁচা পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি। অথচ এই পেঁয়াজ পুরোপুরি পুষ্ট হতে আরো অন্তত ১০ দিন সময় লাগতো।

সাঁথিয়ার পুন্ডুরিযা গ্রামের আরেক পেঁয়াজ চাষি খালেক ব্যাপারী জানান, ‘এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া দামও খুব ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভালো দামের কারণে পেঁয়াজের ক্ষেতে চোরের উৎপাত খুব বাড়ছে। সাঁথিয়ার অনেক গ্রামের কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগে লাগায় তাই তারা আগে বিক্রি করেছে। এখন আমাদের এলাকায় পেঁয়াজ উঠতে শুরু হয়েছে। একেতো চোরের ভয় তাছাড়া দামও ভালো তাই পুরাপুরি পাকার আগেই জমির সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছি।’

চাকলা-পুন্ডুরিয়া গ্রাম ছাড়াও উপজেলার আফড়া, বায়া, শহীদনগরসহ বেশ কিছু গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে চোরের ভয়ে পেঁয়াজের ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতের বেলা কৃষকেরা কয়েকজন মিলে সেখানে বসে পেঁয়াজ পাহারা দেন। এছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় সেখানে পুষ্ট হওয়ার আগেই কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিচ্ছেন।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবির বলেন, পেঁয়াজের এই ভরা মৌসুমে কৃষকেরা ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় অবহিত করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //